মিরপুরে ১০৭ বছরের পুরোনো মাঠ দখলমুক্তের দাবিতে মানববন্ধন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুর মাজার রোড বাতেন নগর এলাকায় ১০৭ বছরের পুরোনো গাবতলী মাঠ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আছে। খেলার মাঠটি দখল করে তারা সেখানে বিভিন্ন গাড়ির ওয়ার্কশপ এবং স্থাপনা বানিয়ে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। এজন্য লাখ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে এবং মাসিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত স্কুলকে ওয়াকফা করে দেওয়া এসব সম্পত্তি দখলে নিয়ে সেই টাকা কয়েকজন ব্যক্তি প্রকেটস্থ করছেন। ঐতিহ্যবাহী এই খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আশপাশের ১০টি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুল, হজরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুল, কবি নজরুল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আল-আমিন আদর্শ হাই স্কুল, অক্সফোর্ড প্রি-ক্যাডেট হাই স্কুল, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, বাতেন নগর এলাকাবাসীর ব্যানারে গাবতলী মাঠের ভেতরে এবং মাজার রোডের উভয় পাশে মাঠ দখলমুক্ত করার দাবিতে কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়।
যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল, ঢাকা মহানগর উত্তর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা শাফায়াত রাব্বি আরাফাত, স্থানীয় যুবদল নেতা শুভ্র, ভুট্টু, রাসেল, খোকন, রিকন, ফারুকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুল সংখ্যক লোকে এতে অংশ নেয়।
এলাকাবাসীরা জানান, ১০৭ বছর আগে মরহুম মুন্সি লাল মিয়া মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের নামে ১ দশমিক ৭ একর আয়তনের এই মাঠটি ওয়াক্ফ করে গেছেন। কিন্তু বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক মদদে মাঠের তত্ত্বাবধায়ক বাবলা মাঠের বিভিন্ন স্থান ইজারা দেন এবং করোনা মহামারির সময় সবার চোখের আড়ালে মাঠের জায়গা দখল করে ‘অবৈধ’ স্থাপনা নির্মাণ করেন।
মাঠটি ঢাকা ১৪ আসনের ১০নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক মাকসুদ জানান, বিগত সরকারের এই আসনের সংসদ সদস্য আসলামের ছত্রছায়ায় বাবলা করোনার সময় রাতের আঁধারে মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণ করেন। তিনি মাঠের জায়গা বিভিন্ন নামে ইজারা দেন এবং সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।এই মাঠটি ১০নং ওয়ার্ডের একমাত্র মাঠ। আশপাশের ১০টির বেশি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে খেলাধুলা করে। কিন্তু মাঠ দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চাই এখানকার সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে যতদ্রুত সম্ভব মাঠটি পুনরায় দখলমুক্ত করা। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হৃদয় স্বজন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে ৬ মাস অতিবাহিত হলো। কিন্তু এখনো এই মাঠ কীভাবে দখলমুক্ত হলো না এটা আমার বুঝে আসে না। আমি দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যতদ্রুত সম্ভব এটি দখলমুক্ত করে ছাত্রদের ফিরিয়ে দিন।
মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের শিক্ষার্থী মাহিম আহমেদ বলেন, আমাদের খেলার মাঠ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন দখল করেছে। আমরা আমাদের মাঠ ফেরত চাই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মাঠ খেলার উপযোগী করতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘মাঠ চাই, মাঠ চাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দিয়েছিতো রক্ত, আরো দেব রক্ত’, ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’, ইত্যাদি স্লোগান দেন।
দারুসসালাম থানার এসআই মিরাজ বলেন, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন হয়েছে, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান, শ্রমিকদল ঢাকা মহানগর উত্তরের গোলাম রসুল পারভেজ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আলম জিন্নাহ, ছাত্রদল পশ্চিম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম, ১০ নং ওয়ার্ড যুবদলের কুদ্দুসুর রহমান বিপ্লব প্রমুখ।