অন্তর্বর্তী সরকার 'মব জাস্টিস' কোনোভাবেই সমর্থন করে না: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
বর্তমান সরকার ‘মব জাস্টিসকে’ কোনোভাবেই সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, যেখানেই এ ধরনের ‘মব জাস্টিস’ হচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্য সরকার ‘চেষ্টা করছে’। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অমর একুশে বইমেলায় চায়না বুক স্টল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের ছয় মাস পূর্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার চেষ্টার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি উপদেষ্টার এই বক্তব্য আসে।
এদিন বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘চায়না বুক হাউস’-এ চীন বিষয়ক বিভিন্ন বইয়ের প্রদর্শনী চলছিল। বিকেল থেকেই স্টলের সামনে চা শিল্প, সিংহ নাচ, ক্যালিগ্রাফি, অপেরা মাস্ক পেইন্টিং এবং পেপারকাটের মতো ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির প্রদর্শনী হয়। বিকেল ৪টার দিকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন স্টলটি পরিদর্শন করেন।
এসময়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মানুষদের জন্য চিকিৎসা সেবা বাড়াতে হাসপাতাল তৈরি করছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশের মানুষ যেন সহজে ভিসা, টিকিট এবং কম খরচে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে, তার জন্য চীন সরকার উদ্যেগ নিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারেও চীন কাজ করছে বলে জানান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেন, চীন আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আগামী বছর আমরা দশটা বই যৌথভাবে প্রকাশ করার ব্যাপারে কাজ করছি। এর মধ্যে পাঁচটি চীনা ভাষার ক্লাসিক বাংলায় অনুবাদ হবে এবং বাংলা ভাষার পাঁচটি ক্লাসিক চীনা ভাষায় অনুবাদ হবে। আমরা দশটা বই দিয়ে শুরু করছি, সামনে আরও বাড়বে। চীনের সঙ্গে আমাদের আরও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কাজ চলমান থাকবে। চীন দূতাবাসের সহযোগিতায় আমরা সিনেমা নিয়েও একটি কাজ করতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমি সবাইকে আনন্দিত করবে।"
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফারুকী বলেন, "আমরা কোনো ধরনের মব জাস্টিসে বিশ্বাস করি না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সচেতন আছে। সবাইকে আহ্বান জানাতে চাই, এখন আমাদের রাষ্ট্র বিনির্মাণের সময়। আমাদের সবাইকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।
৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার বিষয়ে ফারুকী বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট, যারা এতগুলো মানুষ মেরেছে, সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। তাদেরকে বলব, আপনারা দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হোন। তা না করে যে উসকানি দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত খারাপ। দেশের কোথাও কোনো মব জাস্টিস হলে আমাদের সরকার এর পক্ষেতো নয়ই, বরং আমরা ঠেকানোর কাজ করছি।
চলতি বছরের একুশে পদকের ঘোষণায় ১৫ জনের মধ্যে পাঁচজনকে মরণোত্তর এ পুরস্কার দেয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা পুরনো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি। এই মহান মানুষেরা আগেই একুশে পদক পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাদের অতীতে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। আমরা জানি, তখন রাজনৈতিক বিবেচনায় পুরস্কার দেয়া হত। এবার সেটি হয়নি বলে অনেকে প্রশংসাও করছেন।
উপদেষ্টা বলেন, এবার আমরা মরণোত্তর পুরস্কার দিয়ে মূলত পাপমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি চাই আগামী পাঁচ বছর পরে যেন আর মরণোত্তর পুরস্কার দিতে না হয়৷ জীবিত অবস্থাতেই যেন যোগ্যদের সম্মান দিতে পারি।
আরো পড়ুন: মাজার, বাউল, কাওয়ালির আসরে হামলা টলারেট করবো না: ফারুকী