বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ‘নগণ্য’: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ‘মিথ্যাচার ও অপতথ্যের’ অভিযোগ এনে বাংলাদেশে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের হিসাব দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সিএ প্রেস উইংয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী মার্কিন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সব দেশের জন্য প্রযোজ্য, তবে ভারতীয় গণমাধ্যম বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা খুবই সামান্য।
এর আগে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা স্থগিত করেন, যা ইউএসএআইডিসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক কর্মসূচির তহবিলকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। সিএনএন লিখেছে, বিদেশে বিদ্যমান মার্কিন সহায়তা ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না’ তা পর্যালোচনার জন্য ফেব্রুয়ারিতে মানদণ্ড তৈরি করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পর্যালোচনার পরে সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, সংশোধন করা বা সমাপ্ত করা হবে কি না- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারির পর ইউএসআইডি বাংলাদেশেও সব ধরনের প্রকল্প সহায়তা ৯০ দিনের জন্য বন্ধের বিষয়টি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। অর্থায়ন বন্ধের ধাক্কা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লাগতে শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন পরিচালিত প্রকল্পে কাজ করা সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির চিঠির সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছে– ‘বাংলাদেশকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিল আমেরিকা! নতুন চাপে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার’। ভারতের আরো কিছু সংবাদমাধ্যমও শিরোনামে কেবল বাংলাদেশকে রেখে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আনন্দবাজারের সংবাদটিকে ‘বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসাবে বর্ণনা করে এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছিল, “সম্প্রতি এক নির্বাহী আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সব দেশের জন্য মার্কিন সাহায্য রিভিউ করার লক্ষ্যে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে।
কিন্তু এই সংবাদে শুধু বাংলাদেশের নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে চলে আসা কিছু ভারতীয় মিডিয়ার পরিকল্পিত বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের অংশ। শুক্রবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বরাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে হিসাব দিয়েছে, তাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউএসএআইডি’র অধীনে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বেশি দেয়ার তথ্য রয়েছে।
এর বিপরীতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা থেকে এসেছে ১৯১ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর বিশ্ব ব্যাংক থেকে প্রায় ২২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২১৫ কোটি ১৩ লাখ ডলারের বেশি অর্থ এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের দেয়া তথ্য নুযায়ী, ডলারের হিসাবে ওই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৬৯৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এই হিসাবের তুলনায় ইউএসএআইডির হিস্যা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ইআরডির হিসাবে, ইউএসএআইডির অর্থায়ন জাইকার তুলনায় মাত্র ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং এডিবির তুলনায় ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সহায়তা পেয়েছে ২২৯ কোটি ২০ লাখ ৯৫ হাজার ডলারের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবছর হিসাব হয় অক্টোবর থেকে সেপ্টেম্বর। ওই অংকের মধ্যে ইউএসআইডির অধীনে সহায়তা এসেছে ১৭৩ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ডলারের বেশি। এর বাইরে সরাসরি পররাষ্ট্র, কৃষিসহ কয়েকটি দপ্তরের সহায়তা রয়েছে মোট হিসাবের মধ্যে।
২০২৪ সালে ইউএসএআইডির অধীনে যে ৩৭ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ডলার সহায়তা এসেছে, তা জরুরি খাদ্য সহায়তা, মানবিক সাহায্য, ঋণ সহায়তা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা সহায়তার মতো বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে। সব এজেন্সি মিলিয়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহায়তা পেয়েছে ৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২৩ সালে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ডলার এবং ২০২২ সালে ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার ডলার সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরমধ্যে ইউএসএআইডির অধীনে ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ৪০ কোটি ৫ লাখ ২৪ হাজার ডলার এবং ২০২২ সালে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ২ হাজারের কিছু বেশি।