বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার অভিযোগ, যা বললেন জ্যাক সুলিভান

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ক্ষমতার পালাবদলের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা থাকার অভিযোগকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। তিনি বলেছেন, এমন অভিযোগ ভারতও বিশ্বাস করে না।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউজের রুজভেল্ট রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুলিভান বলেন, ঢাকার ঘটনাগুলো নিয়ে ভারতের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকেও এমন কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার পেছনে রয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কলকাঠি নাড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দেন সুলিভান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজপথের বিক্ষোভ এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের পেছনে মার্কিন ভূমিকার ধারণা এবং অভিযোগ ‘অযৌক্তিক’। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের।
আরো পড়ুন : মোদির সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা করলেন মার্কিন উপদেষ্টা?
ভারতীয় অনেক রাজনীতিবিদ সভা-সমাবেশে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। এছাড়া ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা অসংখ্যবার মার্কিন প্রসঙ্গ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
সুলিভান সম্প্রতি নয়াদিল্লি থেকে সফর শেষ করে ওয়াশিংটনে ফিরেছেন। হিন্দুস্তান টাইমস তার কাছে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টা, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতির অভিযোগ, বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের পেছনে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে ভারতের ধারণার বিষয়ে জানতে চায়।
এ ছাড়া হিন্দুস্তান টাইমস জানতে চায়—মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি—এই প্রেক্ষাপটে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে তার মন্তব্য কী। পাশাপাশি, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেটের নেতৃত্বদানকারী’ হিসেবে বলা হয়, এমন অবস্থান থেকে তিনি কীভাবে এসব প্রশ্নের জবাব দেবেন?
জবাবে সুলিভান বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করতে চাই যে, আমি ডিপ স্টেটের নেতৃত্বে আছি এবং সেই সঙ্গে এই ধারণাও প্রত্যাখ্যান করব যে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পেছনে আমেরিকার হাত ছিল। বিষয়টি একেবারেই অবাস্তব। জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমি মনে করি না যে, তারাও এটা বিশ্বাস করেন।
আরো পড়ুন : শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টাও করছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে কোন স্ট্যাটাসে আছেন, সেটা বাংলাদেশের কাছে বিবেচ্য নয়। তাকে ফেরত চাওয়ার সঙ্গে স্ট্যাটাস জানতে চাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
শেখ হাসিনাকে কোন আইনে ঢাকা ফেরত চেয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, এটা জানতে চাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। সবাই জানে যে তিনি ভারতে আছেন। এটা আবার আলাদা করে কেন জানতে চাইতে হবে? তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার একজন নাগরিককে ফেরত চেয়েছে। এখানে ভারতে তিনি কোন স্ট্যাটাসে রয়েছেন, সেটি বিবেচ্য বিষয় কেন হবে?
শেখ হাসিনার ভিসা এক্সটেন্ড করার বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের সংবাদ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারও পাসপোর্ট বাতিল করা হলে সব দেশকে জানিয়ে দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেলে ভিসার কোনো ইস্যু থাকে না।’