বাংলাদেশে টহল দিচ্ছে পাকিস্তানি বাহিনী: নিঝুম মজুমদারের দাবি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে টহল দিচ্ছে পাকিস্তানি বাহিনী! সম্প্রতি রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে পাকিস্তানের বিশেষ সশস্ত্র বাহিনী প্রবেশ করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচার করা হয়েছে। একই ভিডিও ঢাকার রাস্তার দৃশ্য বলে প্রচার হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমেও। ভারতের আজতক বাংলার এক ভিডিও প্রতিবেদনে উক্ত ভিডিও দেখিয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সোয়াত টিমের সদস্যরা ঢাকায় এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই ভিডিওতে বাংলাদেশের আইনজীবী নিঝুম মজুমদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি দাবি করেন (৬ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে), ঢাকার রাস্তাতে এই ধরণের পাকিস্তানি আর্মিরা এসে সোয়াতের ছদ্মবেশে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ছেলেরা বা পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে বাংলাদেশের রাস্তাতে নেমে মহড়া দিচ্ছে, এটা আমার কাছে নজিরবিহীন মনে হয়েছে।
একই ভিডিওর আরেক অংশে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জঙ্গি সর্দার বলে দাবি করেন নিঝুম মজুমদার। তার বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, সেনাপ্রধানের শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছেন যে জেনারেল ওয়াকার ছাত্রজীবনে ক্যাডেট কলেজে পড়তেন। তিনি সে সময় শিবিরের সাথী ছিলেন বলেও দাবি করেন নিঝুম। নিঝুম মজুমদার তার ফেসবুক পেজে আজতকের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান (ফ্যাক্ট চেক) রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানে জান যায়, ভিডিওটি ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, ভিডিওটি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর টহলের কোনো দৃশ্য নয়। বরং, ভিডিওটিতে যে বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে তারা বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত দল ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বা সিআরটির সদস্য। এই সদস্যরা গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নেয়ার সময় নিরাপত্তা প্রদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওতে থাকা একজন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের পোশাকের পেছনে CRT লেখা দেখতে পায়। পাশাপাশি আরেকজন সদস্যের পোশাকে বাংলাদেশের পতাকাও দেখতে পাওয়া যায়। এসবের সূত্রে National Dialogue Bangla (NDB) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর এই সেই বাংলাদেশ CRT (Crisis Response Team) শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সঙ্গে এর হুবহু মিল রয়েছে।
পাশাপাশি ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি রাজশাহী আদালত প্রাঙ্গনে ধারণ করা হয়েছে এবং ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া বাহিনীর নাম Crisis Response Team বা CRT। পরবর্তী অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রিজনভ্যান ঘিরে উত্তেজনা-ডিম হামলার শিকার সাবেক এমপি আসাদ | Jago News শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নেয়ার সময় তার প্রিজন ভ্যানে হামলা করে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসময় তাকে নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনীর পোশাকের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর বাহিনীর পোশাকের হুবহু মিল রয়েছে। তাদের পোশাকের পেছনেও CRT লেখা রয়েছে। এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গনের সাথে আলোচিত ভিডিওর স্থানের বেশ মিল দেখতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে CRT এর বিষয়ে অনুসন্ধানে জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, CRT বা Crisis Response Team হলো বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত দল। দলটি জঙ্গি দমন ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধসহ বড় ধরনের সহিংস পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করে। এছাড়াও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পর সিলেটে আনুষ্ঠানিক মহড়ার মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু পুলিশের এই বিশেষায়িত দলটির। অর্থাৎ, পুলিশের বিশেষায়িত দল ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বা সিআরটিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এদিকে আইনজীবী নিঝুম মজুমদার আজতক বাংলায় সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিষয়ে যেসব অভিযোগ করেছেন তার বিপরীতে তিনি কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেননি। গত জুনে জেনারেল ওয়াকার সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার খবর দিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ওয়েবসাইটে তার একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়। এই জীবনী পর্যালোচনা করে তার ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার কোনো তথ্য মেলেনি যা নিঝুম মজুমদার দাবি করছেন।
এ বিষয়ে জানতে আইএসপিআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা রিউমর স্ক্যানারকে জানায়, জেনারেল ওয়াকার কখনো ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেননি। সুতরাং, বাংলাদেশে পাকিস্তানের বাহিনী টহল দিচ্ছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।