গভীর রাতে শেখ হাসিনার ‘ঘৃণাস্তম্ভের’ গ্রাফিতি মোছায় বিক্ষোভ, প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে থাকা শেখ হাসিনার গ্রাফিতি, যা ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ হিসেবে পরিচিত, গত শনিবার দিবাগত রাতে মুছে ফেলা হয়। এই ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাশে জড়ো হন এবং সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের অনুমতি নিয়ে এই কাজটি করা হয়েছে, এবং তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।
ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল?
গতকাল রাত আড়াইটা থেকে মেট্রোরেলের কর্মীরা ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ থেকে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন ইকবাল ঘটনাটি লক্ষ্য করেন। তারা গ্রাফিতি মুছে ফেলার কারণ জানতে চান, এবং মহিউদ্দিন ইকবাল গ্রাফিতি মুছে ফেলার কাজ বন্ধ করতে বলেন।
এই ঘটনার পর তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপে পোস্ট করা হয়, যেখানে তারা এই কাজের প্রতিবাদ জানান। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং গ্রাফিতি মুছে ফেলার কারণ জানতে চান। মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এটি করা হয়েছে।
প্রক্টরের উপস্থিতি এবং প্রতিবাদ
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। প্রক্টর রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন এবং বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি মন্ত্রণালয়ে পাঠালে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি সেখানে চলে যায়। মন্ত্রণালয় প্রশ্ন তোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার মেট্রোরেলকে এই গ্রাফিতি মুছে ফেলার নির্দেশ দেন।
এমন মন্তব্যে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষুব্ধ হন এবং তারা ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ মুছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, প্রক্টর কি জানতেন না এটি ‘ঘৃণাস্তম্ভ’? এর পরই স্লোগান ওঠে, ‘বাহ্ প্রক্টর চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার’ এবং ‘খুনি হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ার-সাবধান’।
শিক্ষার্থীরা প্রক্টর এবং এস্টেট অফিসার ফাতেমা বিনতে মোস্তফার পদত্যাগ দাবি করেন।
প্রক্টরের বিবৃতি
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ভুল তো আমাদেরও হতে পারে।” তিনি জানান, তিনি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ক্ষমা চাইবেন, তবে এটি কোনো ষড়যন্ত্র নয়, একটি ভুল ছিল।
এস্টেট অফিসার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মন্তব্য
ইস্টেট অফিসার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, "সব প্রক্টর জানেন। আমি কিছু বলতে পারছি না।"
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এবং বলেন, "এটি সারা পৃথিবীতে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ বা হাসিনাকে ঘৃণার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের রক্তের দাগ এখানে লেগে আছে।" তিনি আরও বলেন, এটি মুছে ফেলার পেছনে কারা দায়ী তা তদন্ত করে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের এবং আবু বাকের মজুমদারও একই দাবি জানান।
ফেসবুকে প্রতিবাদ এবং ছাত্রদের সিদ্ধান্ত
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, “২৪-এর ঘৃণাস্তম্ভ আবার আঁকানো হবে। জুলাইকে মুছে দেওয়া এত সহজ নয়।” তিনি প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আশরেফা খাতুনও ফেসবুকে পোস্ট করে বলেন, আগের গ্রাফিতির মতো ‘ঘৃণা’ আর কোথাও প্রকাশ পাবে না।
প্রক্টরের শেষ মন্তব্য
আজ সকালে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটি ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। উপাচার্য উদ্বোধন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরনের গ্রাফিতি সংরক্ষণ করবে। যদি কেউ মুছে ফেলে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”