ঢাকার ওপর দিল্লির হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ক্ষমতায় থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে ৫ আগস্ট সকালে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করে শেখ হাসিনা ঢাকার ওপর দিল্লির হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। তবে, দিল্লির সহায়তা চাওয়ার আগে তিনি দেশে সামরিক শাসন কিংবা জরুরি অবস্থা জারির চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে তিনি ব্যর্থ হন। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা তার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সমন্বয় করে ৪ আগস্টের মধ্যে পুরো পরিকল্পনাটি সাজিয়ে ফেলেন। এই পরিকল্পনায় অংশ নেয়া করেন তৎকালীন এসএসএফের ডিজি মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান এবং সেনাবাহিনীর কিউএমজি লে. জেনারেল মুজিব।
৪ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ফোন করে শেখ হাসিনা জরুরি অবস্থা জারির জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলেন। তিনি সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দেন গুলিবর্ষণ করে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনের জন্য। বিমানবাহিনী প্রধানকে বলেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাতে। কিন্তু শেখ হাসিনার এই নির্দেশ বা অভিপ্রায় বাস্তবায়িত হয়নি। শেষ পর্যন্ত, ৪৫ মিনিটের মধ্যে তার জীবন রক্ষার্থে তাকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য স্যুটকেস গুছিয়ে নিতে বলা হয়। গণভবনে দুপুরের খাবার রান্না করা ছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার পক্ষে খাবার খাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তিনি বিমানবাহিনীর ‘সি-১৩০ জে’ বিমানে করে ভারতে পালিয়ে যান। এই সময় তিনি ১৪টি স্যুটকেস সঙ্গে নিয়ে যান এবং সেগুলোর সঠিকভাবে বিমানে উঠেছে কিনা, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বিমানে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা, জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী এবং একটি শিশু মেয়ে।
‘শেখ হাসিনা পালায় না’—এই দম্ভোক্তির মাত্র দশ দিন পর শেখ হাসিনা নিজেই ভারতে পালিয়ে যান। ক্ষমতায় টিকে থাকার দেড় দশকেরও বেশি সময় পর এমন একটি ঘটনা ঘটতে দেখে দেশের জনগণ হতবাক হয়ে যায়। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো ব্যক্তি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালানোর নজির ছিল না।
শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং ৩ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণভবন ও ঢাকা সেনানিবাসে কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে দেশের একটি গণমাধ্যম। গণভবনের প্রত্যক্ষদর্শী নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সেনা ও বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও বঙ্গভবন সূত্রে এবং কয়েকজন উপদেষ্টার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে অজানা সব তথ্য বেরিয়ে আসে। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই এসব সূত্রের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে শেখ হাসিনার অন্তত দুবার কথা হয়। দোভাল অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে তাগিদ দেন। ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে, ভারতীয় সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
এ ঘটনা একসময় বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেখানে এক প্রধানমন্ত্রী শেষপর্যন্ত তার জীবন রক্ষার্থে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।