সেই ইউএনওকে প্রত্যাহার নয়, পদোন্নতি দিয়ে বদলি

বিবিসি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুরের সদরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে’ বলে মন্তব্য করেছেন —বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেতার কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন সচিব। সেই ইউএনও বদলির জন্য রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তবে এটি প্রত্যাহার নয়, ‘পদোন্নতি দিয়ে বদলি’ বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করবেন আল মামুন, যা প্রশাসন ক্যাডারে ইউএনও (সিনিয়র সহকারী সচিব) পদের আরেক ধাপ ওপরের পদ। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মামুনকে নিয়ে অভিযোগ ওঠার আগেই তার বদলির আদেশ হয়েছিল। প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে রিলিজ (অবমুক্ত) দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবানা তানজিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে, গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সাথে ফরিদপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল সদরপুরের ইউএনও আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, কয়েকদিন আগে তিনি (মামুন) ‘আওয়ামী লীগের ফিরে আসা’ সংক্রান্ত বক্তব্য দিয়েছিলেন।
সভায় উপস্থিত জনপ্রশাসন সচিব ওই ইউএনওকে ‘তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের’ নির্দেশ দেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়। সজলের বর্ণিত ঘটনার দিন সদরপুরের ইউএনওর কক্ষে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে’ এমন বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা ইউএনওর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধন করে প্রতিবাদও জানিয়েছে দল দুটি।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদরুজ্জামান বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে –এমন কোনো কথা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেননি। আমি কর্মসূচির স্থান এবং উনার রুমে দুই জায়গাতেই ছিলাম। ইউএনও আল মামুন উপদেশের সুরে বলেছিলেন, আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকেন তাহলে কিন্তু আওয়ামী লীগ সুযোগ পাবে ফিরে আসার।’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সজল মিথ্যাচার করেছেন বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
তবে সজলের দাবি, তিনি নিজে যা শুনেছেন তাই উপস্থাপন করেছেন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায়। ইউএনও সরাসরি ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসার’ কথা বলেছেন নাকি বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই ‘সুযোগ’ তৈরি হতে পারে বোঝাতে বলেছেন, তা আলাদা করে দেখার পক্ষে নন তিনি। সজল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জনগণের একজন সেবক তার অফিসে বসে কোনো রাজনৈতিক কথা বলবেন কেন? আমি শুধু এই মানসিকতার সংশোধনের জন্য বলেছিলাম।’ অবশ্য মতবিনিময় সভার ভিডিও ফুটেজে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘তিনি (ইউএনও) আমাদেরকে অফিসে ডেকে ছলে-কৌশলে বলার চেষ্টা করে ‘আওয়ামী লীগ উইল বি কাম ব্যাক, টুডে অর টুমরো।’ এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে বদলি হওয়া কর্মকর্তা আল-মামুনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে, স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে তিনি এ ধরনের কথা বলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ফরিদপুরে সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়ে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধির অভিযোগ শুনে মোখলেসুর রহমান ইউএনওকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই নির্দেশ প্রতিপালিত হয়নি, প্রত্যাহার করা হয়নি ইউএনও আল মামুনকে। স্বাভাবিক নিয়মে তার পদোন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, ‘জনপ্রশাসনে যারা আছেন, প্রথমত তাদের কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য এখতিয়ার নেই। এমন কোথাও কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যও দেওয়া উচিত না যেটা পাবলিক (প্রকাশিত) হতে পারে।’ আবার কোনো রকম তদন্ত ছাড়া ‘তাৎক্ষণিক’ শাস্তি দেওয়া উচিত নয় বলেও অভিমত তার। এই অধ্যাপক বলেন, ‘কর্মকর্তা আসলেই বলেছেন কি না, আসলেই ছাত্র প্রতিনিধি শুনেছেন কি না সেটা তো তদন্ত করে বের করে আনতে হবে। তার আগে প্রত্যাহার বা বদলির সিদ্ধান্ত কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়।’
উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আল মামুন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা।