প্রেস ব্রিফিং
র্যাবের দুষ্কর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ডিজি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
আয়নাঘরসহ র্যাবের গুম-খুন-অপহরণের বিচার, বাহিনীর বিলুপ্তি ও পোশাক পরিবর্তন এবং ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পরা সদস্যদের বিষয়ে কথা বলেছেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান। এ সময় র্যাবের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সমসাময়িক বিষয় ও সাম্প্রতিক আভিযানিক কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
র্যাব ডিজি বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে গুম, খুন, অপহরণসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাহিনীটির হাতে নির্যাতিত, অত্যাচারিত ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা হত্যার শিকার হয়েছেন- তাদের পরিবার ও স্বজনদের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করি। এ সমস্ত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে বিচার প্রত্যাশা করছি। অন্তর্বর্তী সরকার গুম, খুন কমিশন গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা আশা করব, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত ও বিচার হবে। আমরা মনে করি, তদন্ত ও বিচারেই র্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব। অন্য কোনো উপায়ে দায়মুক্তি সম্ভব নয়।
র্যাবের আয়নাঘর প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাহিনীর বক্তব্য কী? জানতে চাইলে ডিজি বলেন, র্যাবে আয়নাঘর ছিল, আছে। সেটা সেভাবেই রাখা হয়েছে। গুম, খুন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে আয়নাঘরসহ যা যে অবস্থায় আছে সেভাবেই রাখার জন্য। আমরা কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করিনি। যা যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় রাখা হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরা মনে করি, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
র্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, আমি র্যাবে কর্মরত আছি, আমাদের দায়িত্ব নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব। এ ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তার অপেক্ষায় থাকব। র্যাবের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে র্যাবের পোশাক পরিবর্তন করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, পোশাক পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছি। তবে পোশাকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- যে মানুষটি তা পড়ে। একজন ভালো মানুষ যে ইউনিফর্মই পড়–ক তার কাছ থেকে ভালো কাজ পাব; আর খারাপ ব্যক্তির কাছ থেকে ভালো কিছু পাব না। র্যাবের নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। আমরা র্যাবের একটি আইন করার চিন্তা করছি।
৫ আগস্টের আগে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব ডিজি বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে, ফৌজদারি মামলা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যানালেও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। আমরা আশা করব, এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ে। এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক শহিদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা। সাংবাদিকরা সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে যদি কাজ না করতে পারেন তাহলে গণতান্ত্রিক দেশের প্রশ্ন থেকে যায়। সাংবাদিক বন্ধুরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সর্বাত্মক অগ্রাধিকার দেব।
র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মুফতি হান্নান, বাংলা ভাই ও শায়েখ রহমানসহ অনেক বড় বড় জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। কিন্তু ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হচ্ছে, র্যাবের জঙ্গি গ্রেপ্তার ও অভিযান সাজানো নাটক। আপনারা এই জঙ্গি অভিযানকে নাটক বলছেন কিনা? জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গিদের তৎপরতা ছিল, আমরা দেখেছি। র্যাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভবিষ্যতেও যাতে কোনোরূপ জঙ্গি তৎপরতা দেশে বিস্তার লাভ করতে না পারে- এ বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি, কাজ করে যাচ্ছি।
সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এই মামলার তদন্তে আশানুরূপ ফল না হওয়ার কারণে আদালতকে অবহিত করি। আদালত এই মামলা তদন্তে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এখানে আমরা সফলতা পাব।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে র্যাবের বেশকিছু সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং কমিশনে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে র্যাব কোনো সহায়তা করবে কিনা। জানতে চাইলে র্যাব প্রধান বলেন, আদালত ও আইনের নির্দেশ মানতে বাধ্য র্যাব। আমরা নিজেরাও চাইব এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক ও বিচার হোক।
৫ আগস্টের পর বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের ১৬ সদস্যকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরে র্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। এ কাজ করতে গিয়ে র্যাবের ১৬ জন সদস্য বিভিন্ন অপরাধে সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অপরাধের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাবের ৫৮ জন কর্মকর্তা ও ৪ হাজার ২৪৬ সদস্যকে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও এ সময় র্যাবের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন এ
কে এম শহিদুর রহমান।