সাগর থেকে তেল-গ্যাস তোলার দুয়ার খুলবে এবার!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ এএম

ছবি : সংগৃহীত
সবশেষ ১১ বছর আগে সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল। এরপর সম্ভাবনা কথা বলা হলেও নতুন করে কাজ কিছু হয়নি। তবে আবার অনুসন্ধান শুরুর উদ্যোগ বেশ আশা জাগাচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপচয় করে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের এ প্রক্রিয়া শুরু করে যাওয়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তা থেমে থাকেনি। সরকারের পালাবদলের পরও অন্তর্বর্তী সরকার কাজটিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
আশা করছে এবার তারা অধরা থেকে যাওয়া সমুদ্রের ‘সুনীল অর্থনীতির’ সোনালী দিগন্তের একটা অংশ উন্মোচন করতে পারবে। এ দফায় দেরি না করে অনুসন্ধান কাজের জন্য তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি বেছে নেয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস খোঁজার প্রথমভাগের অংশ হিসেবে অনুসন্ধানকারী কোম্পানি নির্বাচন প্রক্রিয়ার এক ধাপ প্রায় শেষের কাছে এসে পৌঁছেছে। আমেরিকার দুটি বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি এশিয়ার পাঁচটি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি এখন পর্যন্ত আগ্রহ দেখিয়েছে। বাস্তবে এসব কোম্পানির আগ্রহ কতটুকু তা সুস্পষ্ট হবে সোমবার।
এদিন এসব কোম্পানির একটি ভালো সাড়া আশা করছেন সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র ‘অফশোর বিডিং’ আহ্বানকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। বেলা ১টায় অফশোর বিডিংয়ের দরপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হচ্ছে; যাতে অংশ নিতে দরপত্রের কাগজপত্র সংগ্রহ করেছিল সাতটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর শুরু হবে দরপত্র পর্যালোচনা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, সাতটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি যেসব প্রস্তাব জমা দেবে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ বছর মার্চে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৯টি অগভীর ও ১৫টি গভীরসহ সমুদ্রদের মোট ২৪টি ব্লক ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়; যেজন্য শেষ সময় বেঁধে দেয়া হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর এসময় আরো তিন মাস বাড়িয়ে ৯ ডিসেম্বর করা হয়। এতে অংশ নিতে শেষ পর্যন্ত সাতটি কোম্পানি দরপত্রের শিডিউল সংগ্রহ করে।
আরো পড়ুন : সয়াবিন তেলের সংকট নেই: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে নাম লেখানো অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এবার মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল বঙ্গোপসগারে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানকারী যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কোম্পানি শেভরন।
বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের অভিজ্ঞ সিঙ্গাপুরভিত্তিক ক্রিস এনার্জি, বঙ্গোপসাগরের অগভীর অংশে দুটি ব্লকে (ব্লক এসএস-৪ ও এসএস-৯) আগে থেকেই অনুসন্ধান কাজে যুক্ত থাকা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি দরপত্র সংগ্রহ করেছে।
নতুন করে এ খাতে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে ইনপেক্স জাপান, থাইল্যান্ডের পিটিটিইপি ও চীনের সিএনওওসি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা এখন অপেক্ষায় আছে আগ্রহ দেখানো কোম্পানিগুলো কতটুকু সাড়া দেবে সেদিকে।
কর্মকর্তারা বলেন, ১০ হাজার ডলার খরচ করে দরপত্রের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে কোম্পানিগুলো। শেষ পর্যন্ত তারা অংশ নিলেই বোঝা যাবে বাস্তবে তাদের আগ্রহ কতটুকু।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি প্রয়োজনীয় হলেও ইতোপূর্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঠিকাদারদের আকর্ষণ করতে পারেনি। তবে এবারের পরিস্থিতি কী হয় তা ৯ ডিসেম্বরের পরে বলা যাবে।
তার মতে, এবারের মডেল পিএসসি আগের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত হওয়ায় সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হতে পারে। একটা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা যেতে পারে। তবুও যেহেতু এটা ব্যাপক বিনিয়োগের একটি বিষয় তাই চূড়ান্ত ঠিকাদারি কোম্পানিই নেবে।