দুদক পুনর্গঠন ফাইল মন্ত্রণালয়ে আটকা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কার্যত আটকে আছে। অন্তর্ববর্তী সরকার গঠিত বাছাই কমিটি ছয়জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে অজানা কারণে মন্ত্রণালয়ে আটকে গেছে ফাইল। দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটির চেয়ারম্যান কাকে করা হবে-তা নিয়ে প্রভাবশালীদের মধ্যে মতদ্বৈধতার কারণে মূলত এ সঙ্কট্রে সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি পক্ষ দুদক সংস্কারের আগে কমিশন পুনর্গঠন করা ঠিক হবে না-এই যুক্তি তুলে কালক্ষেপণের মাধ্যমে তাদের পছন্দের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এদিকে, লম্বা সময় কমিশন শূন্যতায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবিরোধী কঠোরতার ভয় কেটে গেছে। এর ফলে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুর্নীতিবাজ চক্র। সরকারি বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরে টেন্ডার, বদলি ও পদোন্নতিতে ঘুষ বাণিজ্যের পুরোনো চিত্র ফিরে আসছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজের গতি অনেকটাই থেমে গেছে। কর্মকর্তারা সময় পার করছেন ‘রুটিন ওয়ার্কে’। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকায় নতুন কোনো কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ফলে স্বৈরাচারের দোসর হিসাবে পরিচিত কালোটাকার মালিকরাও পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। দুদকের সংস্কার কাজ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সংস্কারের আগে কমিশন পুনর্গঠন করা ঠিক হবে না-এমন যুক্তি সংস্থাটির জন্য আত্মঘাতী। দ্রুত কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে দুদকের কাজে গতি ফেরানো দরকার।
জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর মেয়াদ পূর্তির আগেই বিদায় নিতে হয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ কমিশনকে। এতে এক মাসের বেশি সময় ধরে কমিশন শূন্যতায় দুদকের কাজে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কমিশন শূন্যতায় কাজ কিভাবে চলবে তার কোনো নির্দেশনা দুদক আইন বা বিধিতে না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না।
জানা গেছে, মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ কমিশন বিদায় নেয়ার পর কমিশন পুনর্গঠনে বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সদস্যরা ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। এই তালিকা থেকেই একজনকে চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। ফাইলটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানোর কথা থাকলেও তা পাঠানো হচ্ছে না।
আরো জানা গেছে, দুদক সংস্কারে গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে। সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে চলতি মাসেই। প্রতিবেদনে কমিশনের নেতৃত্বে সংখ্যাগত বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে। তিন সদস্যের পরিবর্তে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন। এছাড়া দুদককে রাজনৈতিক-আমলাতন্ত্রের প্রভাবমুক্ত রাখা, শক্তিশালী আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব থাকছে সংস্থার কমিশনের প্রতিবেদনে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে প্রতিবেদন তুলে দেবেন ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত সংস্কার কমিশন। জানতে চাইলে সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদককে শক্তিশালী, যুগোপযোগী, আধুনিকায়ন, অনুসন্ধান তদন্তে গতি আনা, বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করাসহ নানামুখী প্রস্তাব থাকছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে দুদকের নেতৃত্ব নির্বাচনে বাছাই কমিটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, কমিশনে প্রশাসনিক আমলা নির্ভরতা কমানো, সংস্থাটিকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করতে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল করা, বিতর্কিত ৫৪ ধারা বাতিল, দুর্নীতি সংক্রান্ত অন্যান্য আইনকে দুদকের তফশিলে সম্পৃক্ত করা, দুর্নীতি দমনে বাধা সৃষ্টি করে এমন ধারা ও বিধি সংস্কার করার প্রস্তাব থাকছে। এছাড়া দুর্নীতি মামলার কার্যক্রমকে বেগবান ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্থায়ী নিজস্ব প্রসিকিউশন গঠনের প্রস্তাবনাও থাকছে।
দুদকের সাবেক পরিচালক নাসিম আনোয়ার বলেন, কমিশন না থাকার কারণে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। কমিশনের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশন পুনর্গঠন করা না হলে আইনের কিছু ব্যত্যয় ঘটবে। সেটা হয়তো সরকার কোনো আদেশের বলে বৈধ করে নেবে। কমিশনের পদত্যাগের ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দুদক সংস্কারসহ চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে দুদক সংস্কারে কমিশন গঠন করে। এই কমিশন কাজ শুরুর কিছু দিন পর ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ, কমিশনার জহুরুল হক ও আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করলে কমিশন শূন্য হয়ে যায়।