অপপ্রচার রোধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করবে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা মাহফুজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকার কাজ করবে। তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত কিছু ফলপ্রসূ পদক্ষেপ দেখতে পাবেন। বিশেষ করে প্রেস উইংয়ে কাজটা করছে দীর্ঘদিন ধরে। আমরা মনে করি দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপ্লব করে যাচ্ছে। এটা পুরো দুনিয়ায় তুলে ধরতে পারব।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে আবার সংলাপে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারে যেকোনো মূল্যে, যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখতে প্রো-অ্যাক্টিভ হিসেবে কাজ করবে। হঠকারী কাজে সরকার আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। বরং আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাবো।
মাহফুজ আলম বলেন, আজকের সব ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টা শুনেছেন। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে ও বিপক্ষে যেসব শক্তি রয়েছে, তাদের একটা বার্তা সরকার দিতে চেয়েছে। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রদায়গত দিক থেকে একটা পয়েন্টে আছে, এক জায়গায় মিলিত হয়েছে।
আরো পড়ুন: ‘জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে সরব, সার্বভৌমত্বে নিরব কেন’
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংহতির শক্তি বৃদ্ধি করব। বাইরের যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, আমরা যদি এ দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে বাইরে যতই অপপ্রচার চলুক বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটাই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।
মাহফুজ আলম বলেন, এখানে হিন্দুসহ অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোনো নিপীড়ন হয়ে থাকলে.. আমরা বলি না যে নিপীড়ন হয় না। যদি হয়ে থাকে সেটার বিপরীতে সরকারের ব্যবস্থা আপনারা প্রচার করবেন। সুনামগঞ্জের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। সেটা গণমাধ্যমকে প্রচার করার অনুরোধ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা শেষে বলেছেন— সম্প্রীতি দরকার। সেটার সঙ্গে ভয় যাতে জড়িয়ে না যায়। বরং নাগরিকেরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে, সবার মধ্যে মেলবন্ধন যেন খুব স্বাভাবিকভাবে হয়। শুধু আমরা ঠেকায় পড়ছি তাই হিন্দু-বৌদ্ধদের ডাকতেছি তা যেন না হয়।
মাহফুজ আলম আরো বলেন, আমরা সব দল, মত, পথ ও ধর্মের মানুষ যেন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে দাঁড় করাতে পারি। এ জন্য ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন চেয়েছি। তারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমরা আশা করি বাংলাদেশ যে গতিতে আগাচ্ছে এবং জাতীয় ঐক্য হচ্ছে এটা ভবিষ্যতে অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: মতপার্থক্য থাকলেও আমরা একই পরিবারের সদস্য: প্রধান উপদেষ্টা
সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমরা প্রেস-নোট দিচ্ছি না। বরং বাংলাদেশের যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সেখানের সত্যতা তুলে ধরুন। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গণহত্যা হয়েছে তার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে। এখানে যত ধরনের নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু করব। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। অপপ্রচার দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ। আমরা আশা করি তাদের সুমতি হবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে সত্যটা তুলে ধরার। সত্যিটাকে জয়ী করতে হবে। আমাদের গণঅভ্যুত্থান আমাদের রক্ষা করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, আইন দেখবে কে অপরাধী। সেখান ধর্ম, বর্ণ, জাত দেখা হবে না। তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের চেয়েও বড় বিষয় হলো আমরা নিজেদের শক্তি কতটুকু বৃদ্ধি করতে পারলাম। আমাদের নিজেদের ভেতরে কতটুকু সংহতি আছে, প্রস্তুতি আছে। আগ্রাসনের কথা শুনতেই পারি। অনেক ধরনের আগ্রাসন অনেক দেশ করতে পারে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে শক্তি বৃদ্ধি করব, শক্তিশালী হব। এটাই দৃষ্টিভঙ্গি।