আমি পাকিস্তানের পতাকাকেও পোড়াবো না, পায়ে মাড়াবো না: তসলিমা নাসরিন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পিএম

তসলিমা নাসরিন
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে, মাটিতে ভারতীয় পতাকা, আর পড়ুয়াদের পা দিয়ে মাড়ানোর ছবি ছড়িয়ে পড়তেই, রীতিমতো তুলোধন সব জায়গায়। ভারতের বহু তারকা মুখ খুলেছেন। এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলেন তসলিমা নাসরিন। তসলিমা ফেসবুকে এই প্রসঙ্গ টেনে লিখেন, ‘বিশ্বের কোনো পতাকাকে কোনো সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন মানুষ অবমাননা করে না। আমি বিশ্বের প্রতিটি পতাকাকে সম্মান করি, প্রতিটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতকে সম্মান জানাতে আমি উঠে দাঁড়াই। পাকিস্তান যে এত আমাদের শত্রু দেশ, আমি পাকিস্তানের পতাকাকেও পোড়াবো না, পায়ে মাড়াবো না।’
তসলিমা আরো লেখেন, ‘বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীরা ভারতের পতাকাকে পায়ে মাড়িয়ে যে সুখ পাচ্ছে, সে সুখ বিকৃত সুখ। যে মস্তিস্কে ঘৃণা থিকথিক করে, সে মস্তিস্ক অসুস্থ মস্তিস্ক। দুঃখ এই, বাংলাদেশ নামের দেশটি অসুস্থ অশিক্ষিত অপ্রকৃতিস্থ লোকের দেশ হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মাটিতে ভারতের এবং ইসরায়েলের পতাকার নকশা এঁকে সেটির উপর হেঁটে যাওয়ার ছবি সামনে আসে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ এমন ঘটনার পর রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (আরএসটিইউ), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসটিইউ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডিইউ) টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া এলাকায় এই পতাকার নকশাগুলো দেখা গেছে গেটের সামনে, যা দেখে রীতিমতো ছিছিকার গোটা বিশ্বে। এই কাণ্ডে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন রাণ সরকার, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীজাত, জিতুরা।
জিতু যে বাংলাদেশিদের কাণ্ডে রীতিমতো হতাশ, তা তার পোস্ট থেকেই স্পষ্ট। লিখলেন, ‘এ কী রূপ তোমার! কার সম্বন্ধে এতকাল শুনে এসেছি। কাকে নিয়ে ভেবেছি, আনন্দ পেয়েছি! ভাবতাম, ‘আমার পাশেই আমার বাড়ি।’ যে দেশের সংস্কৃতি, খাদ্য, বস্ত্র বিপনীর উপমা একসময় সারা বিশ্বব্যাপী বন্দিত হয়েছে/ হচ্ছেও বোধ করি। যার জাতীয় সংগীত হাঁ করে শুনি। ক্রিকেট মাঠে নিজের দেশ কোন টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলে, পরবর্তীতে মন থেকে তোমাদের সাপোর্ট করে এসেছি। আর আজ কী রূপ তুমি দেখাচ্ছ!’
রাণার পোস্ট চাঁচাছোলা। তিনি লিখেছেন, ‘দুষ্কৃতীদের কপাল ভালো ভারতবাসী সহনশীল। ক্ষমা, ত্যাগ, বিনয় ও ধৈর্য্য বৈদিকযুগ থেকে ভারতীয়রা অভ্যাস করে চলেছে। সহনশীলতাকে কেউ দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না’। কবিতার ছন্দে শ্রীজাত বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে লিখলেন, ‘শুশ্রূষা ও জল নিয়ে কী সহজে ভুলে গেলে ঋণ! যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন। ভাষা তো নিশ্চয় প্রিয়। তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি। আমাকে ‘বাঙালি’ থেকে ‘ভারতীয়’ করে তুললে তুমি। …নামেই স্বাধীন তুমি। চেতনায় আজও পরাধীন। যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই নীচে ছিলে একদিন।’