ধর্মনিরপেক্ষতা খারিজের পক্ষে ইউনূস সরকার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ বাসিন্দা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ায়, রাষ্ট্রব্যবস্থার চরিত্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ধারণা রাখা অর্থহীন। তিনি আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’কে অন্তর্ভুক্ত করা বাংলাদেশে সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না।
বুধবার হাইকোর্টে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব মন্তব্য করেন। ওই শুনানিতে তিনি দাবি করেন, সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি থাকার ফলে, রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা ও গুরুত্ব কমে যায়। তাঁর মতে, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর উল্লেখও ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী, যেহেতু এটি বিশেষ কোনো ধর্মের পক্ষপাতিত্ব করে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করা হয়েছিল, তবে এর ফলে সেই সংশোধনীটি সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে এক ব্যক্তি বিশেষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বাধ্য করেছে, যা সংবিধানের সার্বিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি আরও জানান, ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জাতির পিতা’ হিসেবে ঘোষণাটি বাতিল করা হোক এবং ‘সমাজতন্ত্র’কে সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া হোক।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে তাতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে ১৯৭৭ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে আনার পাশাপাশি, শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু ইউনূস সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এই সংশোধনীকে খারিজ করার দাবি তুলেছেন।
এছাড়া, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়েও আলোচনা করেন। তাঁর মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত করা হয়েছে, এবং জনগণের অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, “সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়।” এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বর্তমান সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়ায় সরকারকে আরও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে, ২০০৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা একে অপরকে বন্দি করে ক্ষমতায় আসেন। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয় এবং বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনও উল্লেখ নেই।
শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনকাল শেষ হয়ে গিয়েছে এবং তিনি বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ৫ অগস্ট গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তবে বাংলাদেশের সরকার ভারতের হাই কমিশনের কাছে এ বিষয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে।