মাহমুদুর রহমানকে ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ: ইসকন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইসকনের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ। তা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। ইসকনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এতে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। শনিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলানায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ইসকন নেতারা এসব কথা বলেন।
‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসকন সম্পর্কে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন বক্তব্য ও সংবাদের প্রতিবাদ’ শীর্ষক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষ থেকে আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা আহ্বানের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার বক্তব্য শুধু আমাদের সংগঠনকেই আঘাত করেনি বরং এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও সামাজিক ঐক্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের বিশ্বাস এ ধরণের অযাচিত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দেশের শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর।’
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী আরো বলেন, মাহমুদুর রহমান যদি তার বক্তব্য পরিহার করে, দুঃখ প্রকাশ করে জাতির কাছে ক্ষমা চান, তাহলে আমরা তাকে সাধুবাদ জানাব। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা ও আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তাকে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও হুশিয়ারি দেয়া হয়।
আরো পড়ুন: ভোলা-বরিশাল সেতুর কাজ দ্রুতই বাস্তবায়ন: সেতু উপদেষ্টা
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে যে ছবি বা পতাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে ইসকনের কোনো নিজস্ব পতাকা নেই। যে পতাকাটি দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে ইসকনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ইসকন, বাংলাদেশ তার সব কর্মকাণ্ডে আইন ও শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং বাংলাদেশে শান্তি, সহনশীলতা ও ধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য দৃঢ়নিষ্ঠ। তাই এসব গুজবের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক সংগঠনের বিরুদ্ধে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইসকান বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, তারা যেন এ ধরনের ভিত্তিহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সহায়তা করে। একইসঙ্গে যারা গুজব ছড়িয়ে অথবা ইসকনকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে; তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
আরো পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কমিটিতে যারা থাকছেন
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ইসকন একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন। ইসকন বাংলাদেশ বরাবরই সবার প্রতি মানবিক সহমর্মিতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা প্রচার করেছে এবং জাতীয় সম্প্রীতি ও ঐক্যের পক্ষে কাজ করছে। সুতরাং এসব মিথ্যা প্রচারণা শুধু বাংলাদেশ ইসকনের ভাবমূর্তিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করেনি, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ইসকনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে। বিভ্রান্তিকর প্রচারণাসহ দেশের সব সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন, প্রতিমা-মন্দির-বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট এবং পুলিশ-শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও চাকরিচ্যুত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
সংখ্যালঘুদের ন্যায্য ৮ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানায় ইসকন। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের কোনো বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন- ইসকন, বাংলাদেশের সভাপতি শ্রী সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, কোষাদক্ষ শ্রী জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শ্রী বিমলা প্রসাদ দাস প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পার্থ সারথী কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চিন্ময় গদাধর দাস ব্রহ্মচারী ও হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস।