আজ থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১০ এএম

কাঁচাবাজারেও পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ। ছবি: সংগৃহীত
দেশের কাঁচাবাজারেও আজ (১ নভেম্বর) নিষিদ্ধ হচ্ছে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিনের তৈরি শপিং ব্যাগের ব্যবহার। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধেও চলবে অভিযান।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিনের তৈরি ব্যাগ নিষিদ্ধ এবং কোনো ক্রেতাকে এ ব্যাগ দেয়া যাবে না। এ ছাড়া পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ কার্যক্রমে কাঁচাবাজার ও পলিথিন উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালানো হবে। বেশিরভাগ সুপারশপে এখন পলিথিনের পরিবর্তে পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। সেসব ব্যাগেই ক্রেতাদের পণ্য দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত সফলভাবেই প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। পলিথিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু মার্কেটে কখনো অভিযান চালানো হয়নি। ফলে মার্কেটগুলো দেদারসে পলিথিন এনেছে এবং পলিথিনে পণ্য দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ১ অক্টোবর থেকে ঢাকার সুপারশপগুলোতে প্লাস্টিক ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ আর ব্যবহার করা যাবে না। এটি সরকারের একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি সুপারশপগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে আদানি
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারশপের পাশাপাশি আমরা আগামী ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু করব। সেটি আজকের মতো আলাপ-আলোচনা নয়, আইন প্রয়োগ করা হবে। দোকান-মালিক সমিতির নেতারাও আমাদের কথা দিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে তারা পলিথিনের পরিবর্তে পাট, কাপড় বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার শুরু করবেন।
এরই অংশ হিসেবে আজ থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও চালানো হবে অভিযান।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রপিলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তাদের ভাষ্য, পলিথিনের বিকল্প এখনও তারা পাননি। পলিথিন ছাড়া কীভাবে চলবেন? ক্রেতারা যদি ব্যাগ কিনে নিয়ে আসেন তাহলে তাদের ব্যাগেই মালামাল দেবেন তারা। আর যদি সহজলভ্য ব্যাগ পান, তাহলে সেগুলোও তারা বিক্রি করতে প্রস্তুত।
আরো পড়ুন: নতুন পাঁচটি সংস্কার কমিশন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সমন্বয়কারী লিংকন গায়েন গণমাধ্যমকে বলেন, এটা সত্য যে পলিথিন পরিবেশ, খাল-নদী ও মাটির জন্য বিপজ্জনক। সেজন্য এটি বন্ধ হওয়া দরকার। পাশাপাশি এটিও সত্য যে, বাজারে বিকল্প সামগ্রী না দেয়ায় বিভিন্ন সময় সরকারের নেয়া পলিথিন বন্ধের ঘোষণা সুফল পায়নি। এবারেও আমরা মনে করি যে সাধারণ মানুষ এখনও প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারেনি।
তিনি পরামর্শ দেন, শুরুতেই কাঁচাবাজার নয়, বরং পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পাশাপাশি পাটসহ পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
এর আগে দেশে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হলেও প্রায় দুই দশক ধরে নজরদারির অভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েনি।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারে পর্যাপ্ত বিকল্প সরবরাহ এবং জনগণের সচেতনতা বাড়ানো গেলে এই উদ্যোগটি সফল হতে পারে।