যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর
যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্মিথ কোজেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের সালিশি মামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করেছেন ওয়াশিংটনের একটি আদালত। বাংলাদেশের নিয়োগ করা একটি মার্কিন আইনি পরামর্শক সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে করা ওই মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘ল-৩৬০ ডিগ্রি’র ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার একটি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। সালিশি মামলাটি স্মিথ কোজেনারেশন ২০০৬ সালে দায়ের করেছিল। বৃহস্পতিবার মার্কিন বিচারক কার্ল জে নিকোলস স্মিথ মামলার বিষয়টি নিষ্পতির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে আদালতে হাজির করতে ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন।
মূলত আদালত ওই দিন তাদের বিরুদ্ধে বেঞ্চ ওয়ারেন্ট জারি করেন। মার্কিন আদালত অবমাননার অভিযোগে ওই পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়। সাধারণত বিচারাধীন ফৌজদারি মামলার বিবাদী পক্ষ আদালতের নিয়ম লঙ্ঘন করলে বিচারক বেঞ্চ ওয়ারেন্ট জারি করে থাকেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, বাংলাদেশের নিযুক্ত মার্কিন আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ওয়াশিংটনের আদালতে উপস্থিত হয়ে ওই দুজনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করে। পরে আদালত সেটা আমলে নেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতি দিয়েছিল সরকার। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার চুক্তিটি বাতিল করে। পরে ২০০৬ সালে স্মিথ কোজেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টিকে বাংলাদেশ আদালতে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করেছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম ল-৩৬০। আইনবিষয়ক এই গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতে বাংলাদেশ বলেছে, ৩ কোটি ১৯ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সুরাহার জন্য একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের করা মামলায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করতে ওই দুই উচ্চপদের বাংলাদেশি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মার্কিন বিচারক কার্ল জে নিকোলস বৃহস্পতিবার ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ওই দুই কর্মকর্তা ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে ওয়াশিংটন সফর করছেন। তারা ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন।
মামলাটি ২০০৬ সালে করা হলেও গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো আদালতে হাজির হয় বাংলাদেশের নিযুক্ত আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ল-৩৬০ বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি বিচারকের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি হাজির করে। ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জরুরি নির্দেশনা না দিতে অনুরোধ জানানো হয়।