সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হতে চলেছে?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয় সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য, তবে এই স্কিমটি এখন সংকটে পড়েছে। মাসিক ৫০০ টাকা হারে এই স্কিমের আওতায় নিবন্ধন করা শুরু হয়েছিল, কিন্তু অনেক গ্রাহকই নিয়মিত চাঁদা দিতে আগ্রহী হননি। পটুয়াখালী জেলার এক শিক্ষক মো. সোহেল খান বলেন, তিনি বাধ্য হয়ে পেনশন অ্যাকাউন্ট খুললেও টাকা জমা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। তার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে যদি টাকা জমা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়, তবেই তিনি আবার জমা দেবেন, তবে এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হবে না। এরকম একই অবস্থায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন গ্রাহক, যারা তাদের জমাকৃত টাকা নিয়ে শঙ্কিত। তারা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে পেনশন পাওয়া যাবে কিনা।
সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও, পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রায় ২০ শতাংশ গ্রাহক চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন এবং নতুন নিবন্ধনকারীও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। পেনশন স্কিম নিয়ে মানুষের অনাগ্রহের মূল কারণ কি হতে পারে? এই প্রকল্পের ব্যর্থতা কি অবশ্যম্ভাবী?
বাংলাদেশে বৃদ্ধ জনসংখ্যার সংখ্যা বাড়ছে এবং সরকারের মতে, এই পেনশন স্কিম তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। তবে, পটুয়াখালীর শিক্ষক সোহেল খান মনে করেন, এই স্কিমটি সরকারকে একটি ‘কানিং পলিসি’ হিসেবে কাজ করছে, যা মূলত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য চালু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন কাঠামো দিয়ে আমাদের চলাফেরা খুবই কঠিন। জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে গিয়ে আমরা ঋণের বোঝায় জর্জরিত। পেনশন স্কিমের প্রতি আমার আগ্রহ নেই।’
বর্তমানে, পেনশন কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছে। গত ১৪ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পরিষদ গ্রাহকদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। তবে, সোহেল খানের মতামত অনুযায়ী, সরকার যদি ১০ বছর পর পেনশন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাও তার টাকা জমা দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করবে না।
এছাড়া, পেনশন স্কিমে নতুন নিবন্ধন কম হওয়ার কারণ হিসেবে পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর প্রচারনা কম হওয়ার কারণে নিবন্ধন কমেছে। তবে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য তারা পুনরায় প্রচারনায় যাবেন এবং আগামীতে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে কর্মশালা ও মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া, সেবা বৃদ্ধি করার জন্য ইন্স্যুরেন্স যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, এই স্কিমের কার্যক্রমের মধ্যে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে ক্যাশ ম্যানেজমেন্টের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই, এবং এটা কীভাবে পরিচালিত হবে তা পরিস্কার নয়।’ তিনি মনে করেন, এই স্কিমটি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এটি সরকারের একটি ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এই স্কিমটি একটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত প্রোগ্রাম, যেখানে কোনো টাকা কোথাও যাবে না এবং শতভাগ টাকা একাউন্টে থাকবে। তবে, এই স্কিমকে সফল করার জন্য সময় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি জনগণকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারে, তবে এই পেনশন স্কিম সফল হতে পারে।
আরো পড়ুন: মামলা ও গ্রেফতার থেকে কারা দায়মুক্তি পাবে?
বর্তমানে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ৪টি স্কিমে মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৫৫ জন গ্রাহক নিবন্ধন করেছেন। তবে, বেশিরভাগ গ্রাহকই পুরনো নিবন্ধনকারী, এবং নতুন করে নিবন্ধন করার সংখ্যা অত্যন্ত কম। পেনশন কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে, সময়ের সাথে সাথে এই স্কিমটি আরো জনপ্রিয় হবে এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসবে।