দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষ এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত খামারি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। তাই বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীসহ দেশের ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে আবারো বড় ধরণের বন্যার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।  

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার আয়োজনে সাম্প্রতিক বন্যা, কারণ ও করনীয় শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব পরামর্শ আসে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। গোলটেবিল বৈঠকে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে বন্যা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ নানা সুপারিশ উঠে আসে। 

গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমার ৮০ বছরের জীবনে এত পানি কখনো দেখিনি। সরকারি-বেসরকারি নানা ধরণের পদক্ষেপ নেয়া না হলে ফেনীসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল আবারো হয়তো ডুবে যাবে। বাংলাদেশকে না জানিয়ে নদীর পানি ছেড়ে দেয়ায় ভারতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যৌথ নদী কমিশনে ভালো খাওয়া-দাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই হয় না। 

আরো পড়ুন: এখনই আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালাতে চায় না ভারত, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বন্যার্ত মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সব ধরণের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নতুন সরকারের আমলে সব দাতা সংস্থা এবং দেশ বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে, তাই আর্থিক কোনো সংকট হবে না। প্রতিবেশি দেশ অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে স্বৈরাচারের বিদায়ের পর দেশপ্রেমিক জনগণ নিজেদের হিস্যা আদায় করে নিতে সক্ষম হবে। 

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি এবং মৎস ও পশু খাতে মারাত্মক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজি হারানো কৃষক ও খামারীদের টেনে তুলতে না পারলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। তাই এ খাতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ফেনী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভুইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। এছাড়া বক্তব্য দেন- সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ূব ভুইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক মোতাহের হোসেন মাসুম, ফেনী সমিতির সহ-সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, রোম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম মজুমদার, কানাডার মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা হুমায়ুন কবির পাটোয়ারি প্রমুখ।