×

জাতীয়

দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনবে প্রশাসন: ঢাবি প্রক্টর

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম

দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনবে প্রশাসন: ঢাবি প্রক্টর

ছবি: সংগৃহীত

   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে মারধর করে মেরে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ। 

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে গণমাধ্যমকে তিনি এই কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ থানায় এই বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। এর জন্য প্রস্তুতি চলছে। যুবক মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শৃঙ্খলা কমিটি দায়ীদের শাস্তি দেবে বলেও জানান তিনি।

 এ বিষয়ে প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার মধ্যেই হল থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা যারা জড়িত ছিল তাদের তালিকাসহ একটি রিপোর্ট সন্ধ্যার মধ্যেই হল থেকে প্রক্টর বরাবর দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেবো। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটি দায়ীদের শাস্তি দেবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটেও সেই প্রতিবেদন দেয়া হবে। জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তিনি আরো বলেন, এর বাহিরেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ থানায় এই বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। মামলাটি আজকের মধ্যেই করা হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে এবং ভবিষ্যতে কেও যেন এমন কোন ঘটনা ঘটাতে না পারে তার জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এই ঘটনায় তদন্ত করার জন্য ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক ড. শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, ড. আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক ড. এম এম তৌহিদল ইসলাম ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী প্রক্টর এ. কে. এম. নূর আলম সিদ্দিকী।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে আটটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠে হলটির কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়। চোর সন্দেহে বুধবার তাকে হলের প্রধান ভবনের অতিথি কক্ষে ও বর্ধিত ভবনের অতিথি কক্ষে কয়েক দফা পেটানো হয়।  পরে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়।

জানা যায়, বুধবার হলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা চলছিল। দুপুরের দিকে হলের ৬ জন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তোফাজ্জল নামের ওই ব্যক্তি হলে আসলে তাকে ফোন চুরি করার সন্দেহে আটক করে শিক্ষার্থীরা। এরপর রাত সাতটা সাতচল্লিশ থেকে আটচল্লিশ মিনিটের সময় তাকে হলের প্রধান ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রধান ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসার সময় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।

আরো পড়ুন: নিহত তোফাজ্জল প্রেমঘটিত কারণে ছিলেন ভারসাম্যহীন

এরপর সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ফোন চুরির বিষয় অস্বীকার করেন। তখন তাকে এক দফা পেটানো হয়। তবে সেগুলো চড় থাপ্পড় এমন ধরনের। এরপর তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খেতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ডাল ও মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়।

এরপর তাকে হলের বর্ধিত ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে কয়েক দফা পেটানো হয়। তখন স্টাম্প ও লাঠি দিয়ে তাকে পেটানো হয়। এক পর্যায়ে তাকে আবারো হলের প্রধান ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসা হয়। সেখানেও তাকে পেটানো হয়। রাত ১০ টা ৫২ মিনিটে তাকে সেখান থেকে বের করে প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে তোলা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বের করার সময়টিও নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। ফুটেজে দেখা যায় এসময় তিনি দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে গাড়িতে উঠছেন। তার শরীরে ছোট হাফ প্যান্ট ছাড়া অন্য কোন কাপড় ছিল না।

সেখান থেকে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থানের পর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। 

হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার রাতে চোর সন্দেহে আটকের খবর পাওয়ার পরই তারা ঘটনাস্থলে চলে আসে। শিক্ষকরা ঐ ব্যক্তিকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে থানায় সোপর্দ করার কথা বললেও উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বাঁধা দেয়। এমনকি তাকে থানায় তুলে দিলেও শিক্ষকদের তরফ থেকে ঐ ছয়টি ফোনের টাকা দিতে হবে বলে এমন দাবিও তারা করেন। 

এদিকে ঘটনা ঘটার পর বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ, সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক। এরপর সকাল সাড়ে সাতটায় ফজলুল হক মুসলিম হলে যান তারা। এসময় তারা প্রধান ভবন ও বর্ধিত ভবনের অতিথি কক্ষ গুলো ঘুরে দেখেন এবং রুমগুলো সিলগালা করে দেন। এরপর হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। এসময় প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুমকে আজকে সন্ধ্যার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে দায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন ও একটি রিপোর্ট প্রক্টর বরাবর দিতে বলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App