তীব্র গ্যাস সংকট: লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম

আমদানি-নির্ভরতাই ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলেছে গোটা জ্বালানি খাতকে। ছবি : সংগৃহীত
তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদার তুলানায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে সারাদেশে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এদিকে, রক্ষণাবেক্ষণ শেষে সাড়ে তিন মাসেও সামিটের এলএনজি টার্মিনাল সচল হয়নি। গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অর্ধেক সার কারখানা এবং ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্প কারখানায়ও। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তীব্র গ্যাস সংকটের কারণেই দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে লোডশেডিং। নিজস্ব উৎসে জোর না দিয়ে আমদানি-নির্ভরতাই ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলেছে গোটা জ্বালানি খাতকে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাম্পগুলোতে প্রতিদিন গ্যাসের জন্য ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি গাড়ি। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা; তবুও অপেক্ষা ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর এটিই যেন এখন দেশে জ্বালানি পরিস্থিতির প্রতীকী রূপ।গ্রাহকরা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না গ্যাস। আর এতে বাড়ছে সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি।যানবাহনের পাশপাশি অন্যান্য খাতেও গ্যাসের সংকট তীব্র। চাহিদার তুলনায় অর্ধেক জোগান না দেয়ায় দেশে ছটি সার কারখানার তিনটিরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
একই অবস্থা বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে দেশে বেড়ে চলা লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ গ্যাসের তীব্র সংকট। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাহিদার বিপরীতে গ্যাস দেয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ শতাংশের মতো। এ কারণে কেবল গ্যাসের অভাবেই বন্ধ ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই চিত্র শিল্প কারখানাতেও। গ্যাসের অভাবে ধুঁকছে রফতানিমুখী খাত। অস্বাভাবিক হারে কমছে এ খাতের উৎপাদন।
আরো পড়ুন : বাতিল হচ্ছে জ্বালানি খাতের ৪ মেগা প্রকল্প
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার বলেন, গ্যাসসংকটে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা ধরা হয় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ ঘুরপাক খাচ্ছে ২৫শ থেকে ২৬শ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘরে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ সামিটের ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) মিলছে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩শ মিলিয়ন কম। এতে পরিস্থিতি আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) জানাচ্ছে, আবারো উৎপাদনে ফিরছে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার আশায় সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় উৎসে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানি-নির্ভর নীতির কারণে দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে জ্বালানিখাতকে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গ্যাস আহরণে জাতীয়ভাবে নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর আরো জোর দিতে হবে। এতে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে।