বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কের পরিচয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। এজন্য সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে তারা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পরই এই চক্রের অপতৎপরতা শুরু হয়। সহজেই মানুষকে বোঝানো সম্ভব হবে- এমন কৌশল অবলম্বন করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে পতিত সরকারের সুবধাভোগী প্রচার করে প্রতারণা করছে চক্র। ভুক্তভোগীদের অনেকে আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, ছাত্রদের প্রতিনিধি, সমন্বয়ক-এমন পরিচয় দিয়ে হত্যা মামলায় নাম দেয়া হবে হুমকি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা দাবি করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। এমন কয়েকজন প্রতারককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করলেও থেমে নেই চক্রের দৌরাত্ম্য।

প্রতারক চক্রের অনেকের মধ্যে ‘ফাহাদ সোহান’ নামে এক যুবকের ব্যাপারে এমন অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকদিন ধরে। যিনি ৫ আগস্ট দুপুরের পর নিজের ফেসবুক আইডিতে ছাত্র- জনতার বিজয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে একাধিক ব্যক্তিকে টার্গেট করে উস্কানিমূলক ও আপত্তিকর পোস্ট করছেন। কখনো সেসব পোস্ট হাইড করছেন, আবার কখনো ওপেন করছেন। দাবি করছেন টাকা। একাধিক ভুয়া আইডি থেকেও তারা অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাহাদ নামের এই যুবক এক দশক আগে সাভার পৌর এলাকার তালবাগ মহল্লায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। কয়েক বছর আগে তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠলে তারা সাভার ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। সাভার থানায় এক তরুণীর অভিযোগের পর তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখেন।

এরপর ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ‘ধার হিসেবে টাকা চেয়ে’ প্রতারণা শুরু করেন। সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে অনেকে প্রতারিত হন। এর মধ্যে ঢাকার ফার্মগেট মনিপুরী পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন- এমন দাবি করে ওই যুবক সাভারে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন। তাদের সংঘবদ্ধ চক্রে অধিকাংশ মাদকাসক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করে ধূর্ত ‘ফাহান সোহান’ নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র সমন্বয়ক দাবি করে নতুনভাবে আত্নপ্রকাশ করেন। নিজের বড় ভাই ফয়সালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র সমন্বয়কদের সমন্বয়ক বলেও দাবি করেন তিনি।

এ অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্বজনরা থানায় মামলা দায়ের করা শুরু করলে চক্রটি তাদেরকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওই এজাহারের বিভিন্নজনের নাম অন্তর্ভুক্তি করা শুরু করে। আবার এজাহারের খসড়া দেখিয়ে লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় কয়েক লাখ টাকা। টাকা নিয়ে চূড়ান্ত এজাহার থেকে অনেকের নাম বাদ দেয়ার ব্যবস্থাও করছে চক্রটি। তারা যৌথবাহিনীর তালিকায় নাম দেয়া ও বাদ দেয়ার কথা বলেও লোকজনকে হুমকি দিয়ে হয়রানি করছে।

ফাহাদ নিজের ফেসবুক আইডি থেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত- এমন কয়েকজনের নাম ও ছবি ব্যবহার করে মনগড়া, সাজানো ও উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছে। তার টার্গেটকৃত লোকজন (যার প্রায়জনই সমাজে প্রতিষ্ঠিত) ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন- এমন অপপ্রচার চালিয়ে হয়রানির ফাঁদ পাতেন। এ অবস্থায় অনেকেই যোগাযোগ করলে টাকা নিয়ে সেসব পোস্ট ডিলিট বা হাইড করেন। পরে আবার সেসব পোস্ট করে নতুন করে দিয়ে টাকা দাবি করে সম্মানহানির চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তিনি। তার বড় ভাই ফয়সাল এসবে সায় দিয়ে আসছেন।

জাবি ও ঢাবি ছাত্র সমন্বয়কদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই দুই অছাত্র (ফাহাদ-ফয়সাল) সমন্বয়ক বা ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন- এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক দাবি করেছেন, যারা এসব করছে তারা প্রতারক। লোকজনকে হয়রানি করে টাকা হাতাতে মিথ্যে পরিচয় ব্যবহার করছেন। তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করতে পরামর্শ দিয়েছেন ছাত্র সমন্বয়করা। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।