এমপি আনার হত্যা মামলায় বারাসাত আদালতে চার্জ গঠন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় রহস্যজনকভাবে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার ওই চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে।
ঘটনায় প্রথম গ্রেপ্তারের ৮৭ দিনের মাথায় আদালতে এই চার্জশিট জমা পড়লো। গত ২৩ মে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সিআইডি সূত্রের খবর, চার্জশিটে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়াম হোসেনের নাম আছে। তবে কী উদ্দেশে তাকে খুন করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তদন্তকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহিনকে এখনো ধরা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে ঘটনার মোটিভ এখনো অজানা।
চলতি বছরের ১২ মে সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান। গত ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনের নির্দেশেই এই হত্যা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন : এমপি আনার হত্যায় জড়িত দুজন ভারতে রয়েছে
খুনের পর সেই লাশের টুকরোগুলোকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। পরে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডির কর্মকর্তারা। যা দেখে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান সেগুলি মানুষের হাড়।
পাশাপাশি সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চার কেজি মাংস। উদ্ধার ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ওই মাংসের টুকরোগুলো পুরুষ মানুষের। সিআইডির সূত্র বলছে, তবে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি।
ইতোমধ্যেই এই খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এদের একজন কসাই জিহাদ হাওলাদার, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ২৩ মে। অন্যজন সিয়াম হোসেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ৭ জুন। আদালতের নির্দেশে জিহাদ রয়েছেন দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে। অন্যদিকে সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন সিয়াম।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম জানিয়েছিলেন, তিনি পলাতক আখতারুজ্জামান শাহিনের অধীনে ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। শাহিনের নির্দেশেই জিহাদকে কলকাতায় এনে রাজারহাটে ভাড়ার ফ্ল্যাটে রাখেন। খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র, প্লাস্টিক, টলি ব্যাগ সবকিছুই কিনে এনেছিলেন নিউমার্কেট এলাকা থেকে। অন্য দুই অভিযুক্ত ফয়সাল সাজি এবং মুস্তাফিজ রহমান মাংস কিমা করার মেশিন কিনে আনেন। এমপি আনারকে হত্যার পর তার মাংস এবং হাড় আলাদা করা হয় তারপর ছোট ছোট টুকরো এবং কিমা করা হয় ওই মেশিনে। ওই মেশিন এখন কোথায় তা জানে ফয়সাল।
এরই মধ্যে গত ২৮ জুন সঞ্জীবা আবাসনের বিইউ-৫৬ ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয় প্রায় চার কেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস মানুষের কি না তা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছিল সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল)। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, এগুলো মানুষের মাংস। কিন্তু ওই খণ্ডবিখণ্ড লাশ এমপি আনারের কি না তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে চান তদন্তাকারী কর্মকর্তারা। এজন্য এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন এবং রক্তের সম্পর্কের অন্যান্য আত্মীয়দের ডেকে তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানায় সিআইডি।
ডরিনকে কলকাতায় আসার জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু গত প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এখনো পর্যন্ত কলকাতায় আসতে পারেননি ডরিন।