কোটা আন্দোলনে মৃত্যু
নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সরকারকে শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১০ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত মৃত্যু ও অরাজকতার ঘটনায় নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বের করে সরকারকে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল পাঁচটায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত 'কোটা আন্দোলনকে ঘিরে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড, নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের বিচার করো, চাই শান্তির বাংলাদেশ' শীর্ষক এক মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি সরকারের কাছে এই আহ্বান জানান।
বক্তব্য প্রদানকালে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। এসময় শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মানববন্ধনে ১৪টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে আগস্ট স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদানকালে নাসির উদ্দিন ইউসুফ প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত দাবি করে বলেন, আমরা মনে করি মৃত্যুর ঘটনায় নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বের করা উচিত এবং আমরা একটি শ্বেতপত্র চাই। সংস্কৃতিকর্মীরা একটি 'হোয়াইট পেপার চাই'- কী ঘটেছে এক মাস, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যেনো আমরা ভুলগুলো না করি।
আরো পড়ুন: ঢাবি শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল
তিনি আরো বলেন, আমরা তো নতুনদের ভাষা বুঝতে পারিনা। ওদের ভুল থাকতে পারে, আমরা তাদের ভুল শোধরাতে কাছে যেতে পারিনা। আমাদের তাদের কাছে যেতে হবে। এই দেশটি আমাদের সবার, আমাদের সবাইকে এটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
মৃত্যুর দায় সরকার, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, আন্দোলনকারী ছাত্রসংগঠনকে সহিংসতায় মৃত্যুর দায় নিতে হবে উল্লেখ করে বাচ্চু আরো বলেন, কেন এত প্রাণ বিসর্জন দিতে হলো? পুলিশ গুলি করেছে যেমন সত্যি, ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবিরের লোকেরাও গুলি করেছে সেটাও সত্যি।
তিনি আরো বলেন, আমরা মৃত্যু, অগ্নিসংযোগ, সংঘাত এবং পুলিশের গুলি দেখেছি- এই সবকিছু দেখবার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এরকম বাংলাদেশ দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত নই।
বক্তব্য প্রদানকালে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করাকে আগস্টের বড় অর্জন উল্লেখ করে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আমরা শিল্পীরা মাঠে নেমে জনগণের কোন পথে যাওয়া দরকার সেটা বুঝিয়ে দেয়ার কাজটিই করি। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ এই কাজটা করেছিল। সেসময় যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়েছিল কিন্তু তাদের আতুরঘর জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি। আজ যা হলো সেটি আগস্টের আমাদের বড় অর্জন।
আরো পড়ুন: শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
বক্তব্য প্রদানকালে চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সব প্রকার অপকর্মের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে বলেন, চলমান আন্দোলনে বিভিন্ন স্থাপনায় শিক্ষার্থীরা আগুন দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিরা দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে এই কাজগুলো করেছে। আমরা চাই এসব অন্যায় কাজের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। আমরা যেমন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর বিচার চাইছি। পাশাপাশি দুষ্কৃতিকারীদের বিচারও চাচ্ছি।
সংহতি জানিয়ে সংগঠনটির সহ সভাপতি ঝুনা চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যকার যে বিশাল ফারাক, আগামী প্রজন্মকে তা বুঝাতে হবে। রাষ্ট্র আমাদের সবার। অন্যদিকে সরকার সময়ে সময়ে বদলাতে পারে। যেই শক্তি বিটিভিসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা কাজ করেছে তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমরা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য যতগুলো মৃত্যু হয়েছে সবগুলোর জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং জনসম্মুখে তার রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। এই হত্যার জন্য যারা যারা দায়ী তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমরা এই বাংলাদেশে আরেকটি মৃত্যুও দেখতে চাই না। আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানাই আপনারা প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচারের ব্যবস্থা করুন এবং বিশ্বাসযোগ্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করুন। যাদের প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস থাকবে।
সূচনা বক্তব্য রাখেন জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। এছাড়াও বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার পক্ষে ড. নিগার চৌধুরী ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা বক্তব্য রাখেন।