যেভাবে ফাঁস হয় প্রশ্নপত্র

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৪ এএম

সাজেদুল ইসলাম
সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে সাবেক এক সহকারী পরিচালকসহ ১৪ আসামি।
গ্রেপ্তারের পর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। সেখানে উল্লেখ করেন, পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহ করতেন তিনি। এ জন্য ওই কর্মকর্তাকে এককালীন টাকা দিতেন তিনি। এবারো প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সাজেদুল দুই কোটি টাকা দেন জাফরকে। এরপর তার চক্রের সদস্যদের দিয়ে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করে তাদের কাছে চুক্তিতে সরবরাহ করেন।
সাজেদুলরা চার ভাই-বোন। সবার জন্মস্থান ঢাকায়। তাদের সবার পড়াশোনাও ঢাকায়। তার বাবা চাকরির কারণে ঢাকায় থাকতেন। তার বোন মুন্নিকে সিলেট বিয়ে দিয়েছেন। মুন্নি ও তার স্বামী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নন ক্যাডারে চাকরি করেন। চাকরি পাওয়ার পর সাজেদুল এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সাজেদুলের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সাজেদুল জানান, রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে চার সেট প্রশ্ন ও উত্তরপত্র উপপরিচালক আবু জাফরের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সহযোগী খলিলুর রহমান, প্রিয়নাথ রায়, সাখাওয়াত হোসেন, নোমান সিদ্দিকীর মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করেন। পরে তাদের ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রেখে পরীক্ষার আগের রাতে পড়িয়েছেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, সাজেদুল নগদ টাকা দিয়ে পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্তাদের থেকে প্রশ্নপত্র কিনতেন। পরে তিনি নিজেও পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করতেন। এতে তার ঝুঁকি কম থাকত। পরীক্ষায় কোনোভাবে প্রশ্ন এলোমেলো হলে টাকা দিতে চাইতেন না প্রার্থীরা। এ জন্য সাজেদুল কৌশলে বিনিয়োগের টাকা উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) আবদুল্লাহ আল মামুন এই পরীক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন। তারপরও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে না থেকেও দুই উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম চক্রের হাতে কীভাবে প্রশ্ন গেল, তা তারা তদন্ত করছেন।
পিএসসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা টিমের সদস্যদের একে একে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যে দুইজন উপপরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা পরীক্ষার কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। তারপরও তাদের হাতে কীভাবে প্রশ্ন গেল, এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ পরীক্ষা বিভাগের নয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাখারই কেউ চক্রের থাকতে পারেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আলোচিত পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানিয়েছে, ঢাকায় তিনি একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ির মালিক। গ্রামে আছে তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। সিআইডির কর্মকর্তাদের ধারণা আবেদ আলীর সম্পদ এর চেয়ে বেশি রয়েছে।
আরেক অভিযুক্ত উপপরিচালক মো. আবু জাফর। গ্রামের বাড়ি, পটুয়াখালির গলাচিপার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন ৪-৫ বছর আগে ৬০ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই আবু জাফর বেশ কয়েক বছর ধরে তার স্ত্রী জ্যোতির নামে মালিবাগের চৌধুরী পাড়ায় একটি কোচিং সেন্টার করেছেন। যেখানে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীরা কোচিং করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্নপত্র কেনা বেচার কাজ করতেন জাফর।
আরো পড়ুন: মেয়েকে বিয়ের শর্তে জামাইয়ের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দেন শ্বশুর