আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে এসেছি : জাপানি মা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম

ডা. এরিকো নাকানো
আদালতের আদেশ অনুসারে হাজির থাকতে জাপান থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন মেয়েদের মা ও জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো। বুধবার (১০ জুলাই) বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে জাপানে রেখে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার আদালতে এসে নাকোনো এরিকো বলেন, আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। তিনি জানান, মামলার শুনানির সময় আপিল বিভাগে উপস্থিত থাকতে জাপান থেকে চলে এসেছেন।
বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে জাপানি মা নাকানো এরিকোর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননা মামলার শুনানি ও হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল শুনানির জন্য আগামী ১৫ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে নাকানো এরিকোর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম। আদালতে জাপানি মা নাকানো এরিকো উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ মে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে জাপানি মা নাকানো এরিকোর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননা মামলার শুনানি ও হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল শুনানির জন্য ১১ জুলাই ধার্য করেন আপিল বিভাগ। সেদিন আদালত বলেছিলেন, মামলার উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আমরা ওই দিন জাপানি শিশুদের নিয়ে আপিল মামলা নিষ্পত্তি করব। এর আগে, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে চলে যাওয়ার ঘটনায় জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন ইমরান শরীফ। এছাড়া, জাপানি তিন শিশুকে বাবা-মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন উভয়পক্ষ।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়। এরপর বনিবনা না হওয়ায় দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। পরবর্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে এসে রিট করেন এরিকো। তখন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে বলেন।
২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরিফ আপিল করেন জেলা জজ আদালতে। একই বছরের ১২ জুলাই জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন। তারপর তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সেই রিভিশন আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদেশে আদালত বলেন, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা শরীফের হেফাজত মায়ের পক্ষে নির্ধারণ করা হবে, তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে কন্যা লায়লা লিনা শরীফের হেফাজত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে থাকবে। রায়টি প্রকাশ করার পর দুই পক্ষই আপিল করেন। ইমরান শরীফ বড় মেয়েকে চেয়ে এবং এরিকো মেঝ মেয়েকে চেয়ে লিভ টু আপিল করেন। তবে ইমরানের আবেদনে একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন ছিল। যেখানে বলা হয়েছে, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেয়া হয়। এরপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।
ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমামের দাবি, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও বড় মেয়েকে নিয়ে এরিকো চলে গেছেন। এই কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। তখন আইনজীবী মো. শিশির মনির জানান, ৯ এপ্রিল দুপুর একটায় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশ হওয়ার আগেই সকাল ১১টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে তারা দেশত্যাগ করেন।