অঢেল সম্পদের মালিক মতিউরের বান্ধবী কে এই আরজিনা?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
উচ্চবংশীয় এক ছাগল। যার জাবরকাটা এখনও শেষ হয়নি। তাইতো ছাগলের পেট থেকে যেন বের ধারাবাহিকভাবে বের হতে লাগলো রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য। ছাগলকে অনেকে ছোট করে দেখলেও উচ্চবংশীয় এই ছাগলের ক্ষমতার দাপট দেখছে দেশবাসী।
যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন মতিউর। আর চেরাগের সঠিক ব্যবহার করতেও ভুল করেননি তিনি। যখনই ইচ্ছে হয়েছে তখন ঘষেছেন চেরাগ। আর গড়েছেন পাহাড়সম সম্পদ।
তবে তা তিনি একাই ভোগ করেননি। চেরাগের খানিকটা তুলে দিয়েছেন ঘনিষ্টজনদের হাতেও। আর সেই সম্পদকে পুঁজি করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুনের সঙ্গে। এরপরই চেরাগ হস্তান্তর করেন তার এই বান্ধবীর হাতে। তিনিও মতিউরের সহায়তায় চেরাগ ঘষতে থাকেন। হয়ে উঠেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। তাই বলাই যায় এ ক্ষেত্রে যেন এক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন ছাগলকাণ্ডের মতিউর।
সাবেক আইজিপি বেনজিরের পরে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন পুরো দেশে। তবে কর্মস্থল থেকে সম্পদ গড়েই ক্ষান্ত হননি মতিউর। সেখানে বান্ধবীও বানিয়েছেন আরজিনা খাতুন নামে এক সচিবকে। আর বান্ধবী আরজিনার সঙ্গে স্পর্শকাতর কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে নেট দুনিয়ায়।
মতিউর রহমানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকে ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পাওয়া আরজিনা রাজধানীতে ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমি, বাসায় বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র এবং দামি সব আসবাবপত্র করেছেন।
মাত্র তিন বছরে ৫০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক এনবিআরের এই আরজিনা। যার ২০০ ভরিই চোরাচালানের মাধ্যমে আনা, দুদকের কাছে এসেছে এমনই অভিযোগ। আরজিনা রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব।
এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ছিলেন। খোদ এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ-শুধু মতিউর রহমানের বান্ধবী হিসেবে বহু অনৈতিক সুবিধা হাসিল করেছেন তিনি।
গত ১০ জুন দুদকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। তাতে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, মানিলন্ডারিং, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিপুল সম্পদ অর্জন গড়েছেন আরজিনা। চট্টগ্রামে বদলির পর ২০২২ সালে কিনেছেন ৫টি জমি। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকারও বেশি।
এছাড়াও গ্রামে আরও প্রায় এক কোটি টাকার জমি বন্ধক নিয়েছেন আরজিনা। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, আরজিনার ব্যবহৃত বেশিরভাগ গহনাই অনেক দামি। তার অন্তত ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের হীরার গহনা রয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি অন্তত ৫০০ ভরি স্বর্ণ আর ডায়মন্ডের অলংকার কিনেছেন নগদ টাকায়। যার ২শ ভরি এক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ৩ ধাপে চোরাচালানের মাধ্যমে আনার তথ্য ও দালিলিক প্রমাণ দুদকে করা অভিযোগের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ থেকে শেয়ার ব্যবসাও করেছেন তিনি। এক দিনে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগে দ্বিগুণ লাভের নজিরও আছে তার। মতিউরের সঙ্গে একই ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ ছিল আরজিনার। তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল নগদ টাকা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগও আছে।
পাহাড়সম সম্পদের তথ্য বের হলে গতি হারিয়ে ফেলা মতি ছেলেকে অস্বীকার করলেও অনেকেই ভেবেছিলেন মেয়ের কানাডায় বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ির কারণে হয়তো তাকেও অস্বীকার করবেন। কিন্তু মেয়ের বেলায় মতির গতি ঠিক থাকলেও এবার জনমনে আরও একটি প্রশ্ন উকি দিয়েছে নিশ্চয়ই, যে ছেলের মতো কি তবে বান্ধবীকেও অস্বীকার করবেন মতি? আমরাও সেই উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।