২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলা
ঘষামাজা করে নিজের নাম বাদ দেন সাবেক ডিসি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৫০ পিএম

২০ কোটি টাকা আত্মসাত মামলার প্রধান আসামি কক্সবাজার জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন। ছবি : সংগৃহীত
মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাত মামলার প্রধান আসামি কক্সবাজার জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন। মামলার নথি থেকে নিজের নাম কেটে দেয়া এবং বাদীর সই জালিয়াতি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
সোমবার (১ জুলােই) কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীর আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার আরজির সব কাগজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন।জালিয়াতির এ কাজে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ চারজন তাকে সহায়তা করেন। এসময় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক-পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়।
আরো পড়ুন : ড. ইউনূসের মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের বিরদ্ধে। কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তাকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।
দুদক কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুর রহিম জানান, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বরের মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের নাম বাদ দেয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী।
সোমবার মামলার তদন্ত শেষে আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। নথি জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করায় সাবেক জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে।
তিনি বলেন, বাদীর সই জাল করে মামলার আসামি ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জন করা হয়। মামলার পুরো নথি কাটাছেঁড়া ও লেখায় ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়। বাদীর জাল সইয়ের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চিংড়ি, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। চিংড়ি ক্ষতিপূরণের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মনগড়া ২৫টি চিংড়িঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৪৬ কোটি টাকা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুদক দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে। এরপর দুর্নীতি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।