
প্রিন্ট: ১৮ জুন ২০২৫, ০৮:০২ এএম
আরো পড়ুন
‘৫৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, পোস্ট মাস্টাররা জড়িত’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:৫৭ পিএম

জুনাইদ আহমেদ পলক
রাজশাহীর তানোরের পারুল বেগম পোস্ট অফিসে পরিবারের সারা জীবনের সঞ্চয়ের দুই লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। কয়েক মাস পর সেই টাকার হদিস না পেয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি আলোচনায় এলে সারাদেশে এমন আর ঘটনা আছে কিনা, তা তদন্তের নির্দেশ দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ডাক অধিদপ্তরের তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সারাদেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিস থেকে একইভাবে ৫৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন কয়েকজন পোস্টমাস্টার। রবিবার ডাক অধিদপ্তরের এক সভায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য তুলে ধরেন।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তদন্ত অনুযায়ী পারুল বেগমসহ ৫১ জনের কাছ থেকে এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযুক্ত তানোরের পোস্টমাস্টার মোকসেদ আলম। এছাড়া চট্টগ্রাম জিপিওতে ২৯ কোটি টাকা, নোয়াখালী পোস্ট অফিসে সাড়ে ৯ কোটি টাকা, বরিশাল মেডিকেল কলেজ পোস্ট অফিসে দুই কোটি ও পটুয়াখালী পোস্ট অফিসে দুই কোটি, যশোরে এক কোটি ৮৪ লাখ, শ্যামপুর পোস্ট অফিসে ৭৩ লাখ, দিনাজপুর পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্রের ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা রয়েছে।
গুগল নিউজে ভোরের কাগজের খবর পড়তে ফলো করুন
বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার মোকসেদ আলীকে পুলিশে সোপর্দ করা হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হবে। আর পারুল বেগমসহ যাদের টাকা খোয়া গেছে, তা ফেরত দেয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) তরুণ কান্তি সিকদারকে দুই ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকে নালিশ দেয়ার নির্দেশনাও দেন প্রতিমন্ত্রী। একইসঙ্গে গ্রাহক সচেতনতায় সারাদেশের ৯ হাজার ৩০০ পোস্ট অফিস এলাকায় এ বিষয়ে মাইকিং এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে গ্রাহককে জাতীয় হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পরামর্শ দেন তিনি।
পোস্টের সব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এটুআই ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সঙ্গে কথা বলে কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরির পরামর্শ দিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, পোস্টাল রিসোর্স প্ল্যানিং (পিআরপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম কাগজ-কলমহীন ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হবে, যেন অস্বচ্ছ কোনো প্রক্রিয়া না হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ পিআরপি সফটওয়্যারের প্রস্তাবনা চেয়ে আগামী সপ্তাহে জমা দিতে হবে। এজন্য যদি ১০ কোটি টাকা খরচও হয়, তার মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকানো সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ডাক বিভাগে ৪০ হাজার কর্মীর মধ্যে হয়তো ৪০ জন অসৎ হতে পারে। তাদের জন্য পুরো বিভাগ দুর্নামের ভাগিদার যেন না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তদন্ত অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জিপিও থেকে বড় ধরনের আত্মসাতের একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর যেখানে যেখানে আত্মসাৎ ও তছরুপের ঘটনা ঘটেছে তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আমরা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করব। কিন্তু নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করতে চাই না।