বাংলাদেশ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর বড় কর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা!

জিয়াউর রহমান রিন্টু, (চৌগাছা) যশোর থেকে
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০২:০৯ পিএম

মো. জহুরুল ইসলাম
সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যশোরের চৌগাছার এক ইউপি মেম্বার। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন যশোরের নওয়াপাড়া, সাতমাইল, চৌগাছা ঝিনাইদহের মহেশপুর, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক। আর্মির মেজর পরিচয় দেয়া লোকটি আসলে চৌগাছা হাকিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড (হাজিপুর) মেম্বার মো. জহুরুল ইসলাম। হাজিপুর গ্রামের মজলু হকের ছেলে জহুরুল ইসলাম এলাকায় জহির নামে পরিচিত।
যশোরের নওপাড়া জুট মিলের শ্রমিক হারুন জানিয়েছেন, আমার মেয়েকে জনতা ব্যাংকে চাকরি দেয়ার নাম করে ১১ লাখ টাকা নিয়েছে এই জহির। এছাড়া এই নওয়াপাড়া থেকে আরো ৪ জনের কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকা নিয়েছে এই প্রতারক জহির। টাকা নিয়ে তিন চার বছর ধরে সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
চৌগাছার কাবিলপুর গ্রামের মরিয়মের ছেলে ইমদাদুল। এই অসহায় মহিলার ছেলেকে ব্যাংকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১১ লাখ টাকা নিয়েছে জহির। চৌগাছার ফরিদা তার ছেলে আর্মিতে চাকরি দিতে দেড় লাখ, পূড়াপাড়ার মশিয়ার রহমানের ছেলেকে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে ১২ লাখ, জীবননগরের ঝন্টুর ভাইপোকে পুলিশে চাকরি দিতে ৮ লাখ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আরো পড়ুন: মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে কোনো চাপে নেই ডিবি
এভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে জীবন নগরের সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে চলেছেন জহির। একবার টাকা হাতে আসলে জহিরকে আর খুজে পাওয়া যায়না। তবে বিভিন্ন ভুক্তভোগী বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধি করে জহিরের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্প করে রেখেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান ও চৌগাছা পৌর কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান।
হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান জানিয়েছেন দীর্ঘদিন অনেকে আমার কাছে বিচারের জন্য এসেছেন। তাদের বেশির ভাগই জহিরকে আর্মি অফিসার বলে প্রতারিত হয়েছেন। জহিরের কথা বলার ধরন, সুন্দর চেহারা এবং পোশাক দেখে অনেকেই তাকে আর্মি অফিসারই ভাবে। তবে আমার ইউপি সদস্য বলে ইউনিয়নে কোনো অভিযোগ নিতে পারিনি।
কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফরিদা তার ছেলের আর্মিতে চাকুরির জন্য আমার সামনে জহিরকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এছাড়াও আমার কাছে জহিরের ৮ লাখ টাকার ব্যাংক চেকের একটা বিচার আছে। এই চেক সে যশোর সাবমাইলের একজনকে দিয়েছিলেন।
তবে এ সব বিষয়ে বিশেষ করে জহির কিভাবে আর্মি অফিসার হলো এবং কিভাবে তিনি বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ব্যাংকে চাকরি দিচ্ছেন জানতে চাইলে মোবাইর ফোনে সেই ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম ওরফে জহির বলেন,“ আপনার সঙ্গে আমি পরে দেখা করে কথা বলছি” বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এদিকে সংবাদ সংগ্রহের সময় নওয়াপাড়ার শিল শ্রমিক হারুন দুঃখ করে বলেন, ভাই অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ কথা রাখে না। সাহায্য করার কথা বলেও সাহায্য করে না। আপনাকেও হয়তো পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেবে।”