এমপি আনারের হাড়গোড় উদ্ধার!

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম

এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হাড়ের কয়েকটি টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। আনারের হত্যার অন্যতম আসামি সিয়াম হোসেনকে নিয়ে কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি গ্রামের বাগজোলা খালে তল্লাশি অভিযানের ৩০ মিনিটের মধ্যেই উদ্ধার হয় হাড়গোড়। রবিবার (৯ জুন) সকাল আটটার থেকে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। অভিযানের শুরুতেই সেখানে সিয়ামের দেখিয়ে দেয়া স্থানে পাওয়া গেছে একাধিক হাড়গোড়।
আদালতের রায়ে শনিবার সিয়ামকে ১৪ দিনের হেফাজতে পায় সিআইডি। রবিবার সকাল থেকেই এই আসামিকে সঙ্গে নিয়ে খালে তল্লাশি অভিযানে নামে কলকাতা পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ও ভারতীয় নৌসেনা। অভিযানের শুরুতেই সিয়ামের দেখিয়ে দেয়া স্থানে তলাশি শুরু করা হয়। সিয়ামের দাবি- উদ্ধার হাড়গুলো আনোয়ারুল আজিম আনারের শরীরের। যদিও সিআইডি জানিয়েছে, এগুলো এমপির দেহাংশ কিনা জানার জন্য হাড়গুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
সিআইডি জানিয়েছে, সিয়াম জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকটি নতুন তথ্য দিয়েছে। যা এ মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গত শুক্রবার আনার হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে নেপালে আটক সিয়াম হোসেনকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, আনার হত্যাকাণ্ডে যে বা যারাই জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এমপি আনারের মরদেহ টুকরো টুকরো করে বেশকিছু অংশ কৃষ্ণমাটির বাগজোলা খালেই ফেলা হয়েছে বলে ধারণা কলকাতা সিআইডির। খালের পানি নোংরা ও ঘোলা এবং কাদা, মাটি ভর্তি থাকায় উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করলে হাড় বা মাথার খুলির অংশ উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করছে তারা।
এদিকে কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ জানিয়েছেন, নিউ টাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনসের বাথরুমে টুকরো টুকরো করা হয় এমপি আনারের লাশ। পরে সেগুলো পলিথিনে ভরে ট্রলিতে করে নিয়ে পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন খালে ফেলে দেয়া হয়েছে। কসাই জিহাদকে নিয়ে খুনের ঘটনাস্থল কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাট এবং একটি বর্জ্যখাল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। এসময় সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেই ফ্ল্যাটে নেয়া হয় কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে।
বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে ভিডিও কলে যুক্ত করে জিহাদের সঙ্গে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। পরে কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশকে সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে অনুসন্ধান করা হয়। সেখানকার সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় মাংসের বেশকিছু টুকরো।
তবে সেগুলো এমপি আনারের দেহাংশ কিনা, তা জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ফরেন্সিক রিপোর্ট আসবে। তা পজিটিভ হলে সংসদ সদস্যের মেয়ে কিংবা এবং তার ভাইকে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিংয়ের জন্য ডাকা হবে। প্রায় একইসঙ্গে হাড় এবং মাথার খুলি উদ্ধার করা গেলে তদন্তের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে মনে করছে সিআইডি।
এদিকে, এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন আদালত। গত শুক্রবার তাকে বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে তোলা হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস এই নির্দেশ দেন। সেই অনুসারে, জিহাদকে আগামী ২১ জুন আবারো আদালতে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়। খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।
এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেয়া মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। নেপালে গ্রেপ্তার হন সিয়াম হোসেন। সিয়ামও মরদেহ ফেলায় অংশ নিয়েছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে।