×

জাতীয়

জব্দের আগেই অ্যাকাউন্ট খালি করেছেন বেনজীর

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০১:২৭ পিএম

জব্দের আগেই অ্যাকাউন্ট খালি করেছেন বেনজীর

জব্দের আগেই অ্যাকাউন্ট খালি করেছেন বেনজীর। ছবি: সংগৃহীত

   

জব্দের আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। গত ২৩ মে তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তবে এসব অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ছিল, তা জানা যায়নি।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো সম্পদ বিক্রি বা স্থানান্তর করেছেন কিনা, সে তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে তিনি দেশে আছেন কিনা, তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা । একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবার নিয়ে বেনজীর দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।

এদিকে, বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সিটিজেন টিভির মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে এই টিভির অনুমোদনের সময় তারা দু’জনই ছিলেন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, দুদকের চিঠি আমলে নিয়ে ৩ দেশে কোনো সম্পদ আছে কিনা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বেনজীর আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ও তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৩টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী, মেয়াদি, এসএনডি আমানত হিসাব। কিছু ঋণ হিসাবও আছে। অ্যাকাউন্ট জব্দ কার্যকরের আগেই আমানত হিসাব থেকে নগদ টাকা উত্তোলন কিংবা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট জব্দ হতে পারে– বিষয়টি তিনি আগেই জেনে গিয়েছিলেন, নাকি ধারণা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তদন্তকারী একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গত সপ্তাহে তার অ্যাকাউন্টগুলো ফাঁকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যখনই কেউ বুঝতে পারেন তাকে ধরার চেষ্টা চলছে, তখনই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলেন। অবশ্য টাকা তুললেও নগদে রেখেছেন, নাকি অন্য কারও অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন– তা বের করা সম্ভব।

বেনজীর, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। দুদকের অনুরোধে বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যাংকে তথ্য তলব করে চিঠি দেয়। বিএফআইইউ এসব তথ্য পাঠায় দুদকে। এর পর দুদকের তথ্যের ভিত্তিতে আদালত গত ২৩ মে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। একই দিন তাদের ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি জব্দেরও আদেশ দেয়া হয়।

দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে গত ২৬ মে রবিবার ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা এরই মধ্যে সব অফিসে পাঠিয়েছে দুদক। দুদক জানিয়েছে, ব্যাংক হিসাবের অর্থ যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি যাতে হস্তান্তর না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আদালতের জব্দের আদেশ পাঠানো হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিংসহ এ ধরনের অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। গতকাল তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজরা আগেই টাকা সরিয়ে ফেলে, এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যমান ব্যাংকিং নিয়মে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে সরকার এখন মিডিয়ায় দেখাতে চাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। 

তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদ এক দিনে বেনজীর হননি। তাকে পুলিশের আইজি, র‍্যাবের ডিজি এ সরকারই বানিয়েছে। হঠাৎ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বহির্বিশ্বে দেখানো হচ্ছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর।

দুবাই, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের কোনো সম্পদ আছে কিনা– সে তথ্য অনুসন্ধানের অনুরোধ জানিয়ে বিএফআইইউতে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদকের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে এসব দেশের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব দেশে সম্পদ পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) আওতায় তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে সরকার।

বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাইরে সম্পদ আছে কিনা, তা জানতে চেয়ে কয়েকটি দেশে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব দেশ থেকে কোনো তথ্য পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা, প্রাথমিকভাবে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য সাধারণত আদালত বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা যায় না। ফলে কোনো দেশে তার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে পরে এমএলএর আওতায় সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার তথ্য চাইতে হবে। এরপর পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে একবার কেউ পাচার করলে তা ফেরত আনা অনেক জটিল। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ছাড়া কারো পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নজির নেই।

সিটিজেন টিভি নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ের মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে। সিটিজেন টিভির পরিচালক তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর। ২০১৭ সালে এই টিভি চ্যানেল অনুমোদনের সময় তারা দু’জনই শিক্ষার্থী ছিলেন। বেনজীর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ তথ্য জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ তথ্য ইতোমধ্যে দুদকে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর এখনো সম্প্রচারে আসেনি সিটিজেন টিভি। তবে টেলিভিশন চ্যানেলটির নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে ২০২১ সালে একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা বর্তমানে সক্রিয়। অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে বেনজীরের দুই মেয়ের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে– ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী।

২০১৭ সালে সিটিজেন টিভি অনুমোদনের সময় র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। তখন তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সিটিজেন টিভি অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিল– এক বছরের মধ্যে সম্প্রচারে আসতে হবে। আর পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার আগে এবং পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার পর দুই বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না।

দুদকে বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আগে কাছাকাছি সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হলে এ ক্ষেত্রে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ওই টাকা কোথাও বিনিয়োগ করা হলে সেটি অপরাধলব্ধ অর্থ হিসেবে ধরা হবে। এবং এটি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত মোট সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর উত্তোলনকৃত অর্থ কোনো খাতে বিনিয়োগ করা না হলে তাকে মানি লন্ডারিং অপরাধের আওতায় আনা হবে।

আরো পড়ুন: র‌্যাবের নতুন ডিজি কে এই ব্যারিস্টার হারুন

দুদক আরো জনায়, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার পর সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবেই ওই সব হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। এ পর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিলে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App