মা-মেয়েকে গণধর্ষণের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:২৪ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ করতেই চুরির নাটক সাজিয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার (৫০)। এই ঘটনায় গৃহবধূর দায়েরকৃত মামলায় ৩ আসামির মধ্যে ওই আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার (৫০) একই এলাকার মো. মেহরাজকে (৪৮) দিয়ে ঘরের সিঁধ কেটে গরু বেপারী মো. হারুনকে (৪২) নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। সুযোগ বুঝে মেহরাজ ওই নারীর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণ করে। পুলিশ ঘটনার পরপরই সিঁধ কাটার কাজে ব্যবহৃত কোদাল, কাঁচি, কালো প্যান্ট ও কানটুপি জব্দ করেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সীকে প্রধান আসামি, হারুনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। তাৎক্ষণিক পুলিশ আবুল খায়ের মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার রাত ৩ টার দিকে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহেরাজকেও গ্রেপ্তার করা হয়। অপর আসামি হারুনকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, হারুনের সহযোগিতায় ওই নারীকে খাট থেকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে মাটিতে কাঁথা বিছিয়ে আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার তাকে হাত পা বেধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সে সরে গেলে হারুন ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মেহরাজ পাশের রুমে থাকা ওই নারীর মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় কানে থাকা স্বর্ণের কানের দুল ও ঘরে থাকা নগদ টাকা লুট করে তারা। পরে মা-মেয়ের বাঁধন খুলে দেয় এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ধর্ষকরা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো বলা হয়, মূলত হারুন গৃহবধূর বসতঘরে মালামাল আছে বলে মেহেরাজকে চুরি করতে ইন্ধন যোগায়। মেহরাজ রাজী হলে সিঁধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর হারুনের সাথে মুন্সী মেম্বারকে দেখে মেহরাজ অবাক হয় এবং বুঝতে পারে ধর্ষণ করতেই তাকে দিয়ে চুরির নাটক সাজানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, চর জব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে, সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার সকালে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
তিনি জানান, ‘মঙ্গলবার এক জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের মুন্সী মেম্বার মামলা থেকে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দলীয় পদ ও দলের সকল কর্মকাণ্ড থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলো।’
উল্লেখ্য, উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজী মোখলেছ গ্রামের একটি বাড়িতে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ২টার সময় বসত ঘরের সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে গণধর্ষনের ঘটনা ঘটে।