সাভারে ৩০ হাজার মানুষের পাশে রঞ্জিত ঘোষ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২০, ১১:৫০ এএম

সাভার পৌর এলাকার স্বর্ণ কারিগরদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন তরুণ ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষ।
করোনা পরিস্থিতিতে সাভারে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া একজন তরুণ ব্যবসায়ীর নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই ব্যবসায়ীর নাম রঞ্জিত ঘোষ। প্রায় দুই মাস ধরে তিনি ৫০ জনের টিম করে নিরবে ছুটে বেড়াচ্ছেন অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি। কর্মতৎপরতার কারনে তার নিরব কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মুখে মুখে। রঞ্জিত ঘোষ পৌর এলাকার ঘোষপাড়ার বীরেন কুমার ঘোষের ছেলে। তার স্ত্রী ও তিনপুত্র কানাডা প্রবাসী। আর কে এন্টারপ্রাইজ, আর কে ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, আর কে ইমেগ্রেশন, আর কে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, আর কে জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকার রঞ্জিত ঢাকার গুলশান এলাকার বসিন্দা। ক্লান্তিহীন ত্রাণ কার্যক্রম চালতে প্রতিদিন ভোরে ছুটে আসেন সাভার ফিরে যান গভীর রাতে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে রঞ্জিত ঘোষ এক হাজার হতদরিদ্রদের মাঝে নিজ উদ্যোগে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, আলু, লবণ, চিনি, বল সাবান বিতরণ শুরু করেন। এরপর তা আর থেমে থাকেনি। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ে তার কার্যক্রম। বাংলা নববর্ষে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খিচুরি মাংস ও রোজার শুরু থেকে রোজাদারদের জন্য রান্না করা বিরিয়ানী বিতরণ, কর্মহীন পরিবহন শ্রমিক, মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন-খাদেম, মন্দিরের পুরোহিত, স্বর্ণ কারিগর, দিনমজুর-রিক্সাচালক, পত্রিকা হকার, হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে নিত্যপন্য বিতরণ কোথায় নেই তিনি। সর্বত্রই রঞ্জিতের পদচারনা। চাল, গম, ভুট্রা ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষ খাদ্য অদিপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, ডিসি ফুড, আরসি ফুড, সিসিবিআর অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং ঢাকার তেজগাঁও, সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর সরকারী খাদ্য গুদামের কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করেছেন ত্রাণ সামগ্রী।
ত্রাণ তৎপরতার কারনে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সবার কানে পৌছে যায় মানবিক রঞ্জিতের নাম। অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হতদরিদ্রদের তালিকা পৌছে দেন মানবিক সহায়তার জন্য। স্থানীয় সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, পৌর মেয়র হাজি আব্দুল গনি, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম মানিক মোল্যা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজুর রহমান, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরসহ সুশীল সমাজের সবার প্রশংসায় ভাসেন তিনি। এতে নামাবাজার সংলগ্ন নিজের অফিস থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ডে তার ত্রাণ কার্যক্রম আরো বেড়ে যায়। সাভার সরকারী কলেজ, অধরচন্দ্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বিভিন্ন খোলা জায়গায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বিতরণ করা হচ্ছে নিত্যপণ্য।
এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার অসহায় মানুষের ঘরে পৌছে গেছে তার মানবিক সহায়তা। পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে ওএমএসের চাল হাজার আটশো জনের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে সাভারের যেখানেই ত্রাণের দাবিতে অসহায় মানুষজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন তরুণ এই ব্যবসায়ী। করোনা আক্রান্ত পরিবারের পাশেও আছেন তিনি। রোজার পরও যতোদিন করোনা পরিস্থিতি থাকবে ততোদিন সাধ্যমতো কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন রঞ্জিত ঘোষ।
দু:সময়ে সাভারবাসীর কাছে ত্রাতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রঞ্জিত ঘোষ বলেন, কোনরকম প্রচার বা কোনো কিছুর আশায় নয়- সাধ্যমতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে মন থেকে কাজ করছি। সৃষ্টিকর্তা কয়জনকে এমন সুযোগ দেয়। কাজ করতে গিয়ে সামান্য সাহায্য পেয়ে অসহায় মানুষের মুখে হাসির যে ঝিলিক দেখতে পাই তাতে পরম শান্তি মিলে।