×

জাতীয়

বিদ্যুতে প্রিপেইড মিটারে গ্রাহক অসন্তোষ বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০১৯, ০২:৪৫ পিএম

বিদ্যুতে প্রিপেইড মিটারে গ্রাহক অসন্তোষ বাড়ছে
   
বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে ভৌতিক বিলের অভিযোগে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকদের বিক্ষোভ চলছে। ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী গাজীপুর নাগরিক ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন ও সদস্য সচিব এ এন এম মুনীর হোসাইন দাবি করেন, প্রিপেইড মিটারে আগের মিটারের প্রায় আড়াই গুণ বেশি বিল নেয়া হচ্ছে। কারো আগের বিল যদি ১ হাজার ১০০ টাকা হতো এখন প্রিপেইড মিটারে বিল আসছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া মিটার ভাড়া আগের চেয়ে চার গুণ, বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকলেও মিটার থেকে টাকা কাটা যায়, প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ ব্যয় ডিজিটাল মিটারের দ্বিগুণ, পর্যাপ্ত ভেন্ডিং বা রিচার্জ স্টেশন নেই, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড কিনতে হয়, একাধিকবার কার্ড ক্রয়ের ঝামেলা, হঠাৎ মিটার লক হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, পল্লী বিদ্যুতের লাইনে পল্লী বিদ্যুতের লোক ছাড়া কাজ করা নিষিদ্ধ বিধায় তাদের ডেকেও তাৎক্ষণিক পাওয়া সম্ভব না, আগে ছাপানো বিলিং সিস্টেম ছিল কিন্তু বর্তমানে ফ্ল্যাট রেটে ইচ্ছামতো টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে, ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে, প্রিপেইড মিটার বিলের সঙ্গে আগে স্থাপিত সেন্ট্রাল মিটারেরও চার্জ কাটা যায়, প্রতি রিচার্জেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেয়া হয়, মেয়াদ কত দিন- কত ইউনিট খরচ হলো ডিসপ্লেতে এ রকম কোনো তথ্য নেই। এ রকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের এই প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে। গ্রাহকরা আগের ডিজিটাল মিটারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। সাভার পৌর এলাকার গেণ্ডা মহল্লার বাসিন্দা দলিল লেখক কাজী ইনছানুর রহমান কালাম জানান, প্রয়োজনে বিদ্যুৎ লাইন চাই না, তবুও প্রিপেইড মিটার চাই না। এ ব্যাপারে গ্রাহকদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। অভিন্ন কথা জানিয়েছেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিনহাজ উদ্দিন মোল্লা। ভাগলপুর মহল্লার আবু নাঈম পাঠান রুবেল জানান, ডিজিটাল মিটারের চেয়ে প্রিপেইড মিটারে তার দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে। আগে প্রতি মিটারে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে প্রতি মাসে শুধু লাইন রেন্ট বাবদ ১০ টাকা করে নেয়া হতো। কিন্তু নতুন লাগানো এসব প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে লাইন রেন্ট বাবদ ৪০ টাকা ও ডিমান্ড চার্জ বাবদ (২৫ কি/ও) ২৫ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া অফিস বন্ধকালীন গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে অফিস খোলা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে বলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। ফলে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বা অফিস সময়ের পর মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। অন্য কোথাও কার্ড না পেয়ে গ্রাহকদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা না হলেও প্রায়ই মিটারের ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়, যার সদুত্তর পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট অফিস থেকেও জানা যাচ্ছে না। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন আবির ও জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক নারী নেত্রী হামিদা খাতুন প্রিপেইড মিটার খুলে নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তারা জানান, এর মাধ্যমে গ্রাহকদের পকেট কাটা হচ্ছে। এদিকে আগামী জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে খুলনায় অবস্থিত দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার তৈরির কারখানায় উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কোম্পানি গঠনসহ উৎপাদনের যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সূত্র মতে, দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার তৈরির লক্ষ্যে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়নার হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত ‘বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড’ নামে কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ২ সেপ্টেম্ব^র কোম্পানিটি অনুমোদন পায়। তবে বছর না গড়াতেই আগামী জুলাই মাসেই উৎপাদন শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। খুলনা মহানগরীর মোহাম্মদনগরে প্রাথমিকভাবে এই কাজ শুরু হয়। পরে নগরীর শেখপাড়ায় ওজোপাডিকোর নিজস্ব জায়গায় স্থায়ীভাবে উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করা হবে। এই কাজের জন্য ২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে দুই শিফটে ১০ লাখ মিটার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কমপক্ষে দুইশ জনের কর্মসংস্থান হবে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) কোম্পানি সচিব আবদুল মোতালেব বলেন, এ কোম্পানির মাধ্যমে বর্তমান বাজার মূল্য থেকে বিদ্যুৎগ্রাহকগণকে কম মূল্যে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা সম্ভব হবে। উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কারিগরি বিষয়েও অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তিনি বলেন, এই মিটারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সার্ভিস চার্জও নেই। এ ছাড়া সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু লোক মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শফিক উদ্দিন জানান, এই কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বাংলাদেশে সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে সহজে সরবরাহ করা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App