চা শ্রমিদের ছুটি বৈষম্য দুর ও গৃহকর্মীদের স্বীকৃতির দাবি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) থেকে বঞ্চিত। বাৎসরিক ছুটির ক্ষেত্রে তার বৈষম্যের শিকার। অন্যদিকে গৃহকর্মীসহ বিপুল সংখ্যা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকরা শ্রম আইনের আওতায় নেই। ফলে তারা শ্রম আইনের সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই চা শ্রমিকদের ন্যয্যা অধিকার নিশ্চিত করা ও অপ্রতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের স্বীকৃতি দিতে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। ‘শ্রম আইনের (২০০৬) সংশোধন প্রক্রিয়ায় সুপারিশসমূহ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ফার্স হোটেল এ সভার আয়োজন করে সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম আপীল ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোছা. হাজেরা খাতুন। সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অফিসের প্রোগ্রাম অফিসার নজরুল ইসলাম। সভায় প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন, বিপ্লবী গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সালাউদ্দিন স্বপন, ব্লাস্টের ডেপুটি পরিচালক এডভোকেট মো. বরকত আলী।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ কার্যকর হওয়ার পর ২০০৯, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৮ সনে ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। এ সংশোধনে কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও সংশোধনী শ্রমিকদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। আইনটি দেশের আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরাই প্রধান্য পেয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অর্থাৎ গৃহপরিচারকরা শ্রম আইনে শ্রমিক হিসাবেই স্বীকৃত নন।
প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে, আবার স্বীকৃত শ্রমিকরা সার্ভিস বেনিফিট, ছুটি ভোগের ক্ষেত্র বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার বাধাগ্রস্ত করে রাখা হয়েছে। শ্রম আইন বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। শ্রমিকদের পক্ষে শ্রম আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া খুবই কষ্টকর। বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে প্রচুর মামলা শ্রমিকদের অনুপস্থিতির কারণে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। জটিল ও দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার কারণে শ্রমিকেরা শ্রম আদালত থেকে প্রতিকার পাচ্ছে না। এসব বিষয় বিবেচনা নিয়ে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
আদালতের কারণে শ্রমিকদের বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়, এমন মনে করেন না শ্রম আপীল ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। তিনি বলেন, মামলাজট আছে। সারাদেশে শ্রম আদালতে বর্তমানে ২৩ হাজার ৮৩০টি মামলা আছে। আপিল ট্রাইবুন্যালে আছে ১ হাজার ৫০টি। কিন্তু অনেক মামলায় শ্রমিকদের আইনজীবী উপস্থিত থাকে না। সমন জারির পরেও বাদী-বিবাদী উভয়ই সময় আবেদন করে। ফলে মামলা নিষ্পত্তি হয় না।
শ্রম আইনে কিছু সুপারিশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা উচিত। এখন তথ্য প্রযুক্ত অনেক এগিয়ে গেছে, তাই মামলার বাদী-বিবাদীদের সমন জারির ক্ষেত্রে হোয়াটসএ্যাপ, এসএমএস সার্ভিস ব্যবহারে আইন করা যায় বলে মনে করেন তিনি।