আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৪:১০ পিএম

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খা হলে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শহিদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম শীর্ষক’ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। ছবি: ভোরের কাগজ
আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খা হলে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শহিদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম শীর্ষক’ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর অধীনে হবে তাহলে তারা স্বপ্নের ঘোরে আছে। রাস্তায় যান তাহলে বুঝতে পারবেন। মানুষ ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে না। বলে এ সরকার যাচ্ছে তো?
দুদু বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনন্য কৃতির মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা। এই দল তিনি এমন আদর্শিকভাবে তৈরি করেছেন যে মানুষের হৃদয়ে গেথে গেছে। মানুষ তার হৃদয়ের স্থান দিয়েছে। এই দলকে মানুষ ভালোবাসে বলেই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন একজন বরপুত্র যে সময় তাকে নিয়ে এসেছে। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা ছিল। কিন্তু কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে সাহস করেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করলেন- আমি মেজর জিয়া বলছি স্বাধীনতার ঘোষণা করছি। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, যুদ্ধ করেছেন, আবার ফিরে এসে চাকরিতে জয়েন্ট করেছে কোন রাজনীতির দলের সাথে জাননি। তিনি রাজনীতির লোক না। কিন্তু তিনি যখন রাজনীতিতে আসলেন তখন গণভোটের ব্যবস্থা করলেন। যা বর্তমান সরকার উঠিয়ে দিয়েছে। অনেকেই তাকে ইসলামী নেতা মনে করেন। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধের নেতা। তার সময় সংখ্যালগুরা সবচেয়ে ভালো ছিল। তার ভালোবাসা সকল ধর্মের লোকদের প্রতি ছিল। বাংলাদেশ যা কিছুর উপর দাঁড়িয়ে আছে অর্থনীতি শিক্ষা সবকিছু শহীদ জিয়ার হাতে গড়া।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির দ্বিতীয় পিলার। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যদি কেউ নোবেল পায় সেটা বেগম খালেদা জিয়া পাওয়ার যোগ্য। কথাটি এই কারণে বলছি যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। তার (খালেদা জিয়া) যখন স্বামী যুদ্ধে গেলেন তাকে গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টে রাখা হলো। তখন তো অনেকেই ঘরে বসে ছিল। কেউ কেউ পাকিস্তানি মেজরের গাড়িতে করে হাসপিটালে গিয়েছে ভাতা নিয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তার স্বামীকে হত্যা করার পরে তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তার প্রতি একটু শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তাকে এভাবে মিথ্যা মামলায় জেলে আটক করে রাখত না।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছিলেন। জনগণ কেয়ারটেকার চেয়েছিল বলে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অনেকেই বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জাদু ঘরে রাখা হয়েছে। আমি বলি যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে তাদেরকে জাদুঘরে রাখা উচিত। আর লিখে দিবেন এরা এক সময় আন্দোলন করেছিল আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে এরাই জাদুঘরে থাকার যোগ্য।
বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্যই ডিজিটাল আইন করা হয়েছে মন্তব্য করে কৃষকদলের সাবেক এই আহবায়ক বলেন, বিএনপি সত্য কথা বলে, মানুষের পাশে দাঁড়ায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা মানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা মামলা করে। আর এইগুলো বলা থেকে বিরত রাখতে, মুখ বন্ধ রাখতে ডিজিটাল আইন করা হয়েছে। তবে ডিজিটাল আইন করে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার জন্য মানুষের অধিকারের জন্য। এই জায়গায় কোন আপোষ নাই। এটাই শহীদ জিয়া বেগম জিয়া রাজনীতি। আর একজন আছেন যিনি আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। তার নাম শুনলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, শেখ মজিবুর রহমানের প্রথম পর্যায়ে বিশ্বের উচ্চতায় স্থান পেয়েছিলো কিন্তু স্বাধীনতার পরে তার রাষ্ট্র শাসনের ব্যর্থতার কারণে তার স্থান তলানীতে গিয়েছিলো। তারপরে এই ব্যর্থ রাষ্ট্রকে জিয়াউর রহমান এদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলে, বিশ্বের কাছে সম্মানের স্থানে নিয়েছিলেন এই দেশকে। তিনি এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের জন্য শেখ হাসিনা এই দেশে আসতে পেরেছে। কারণ জিয়াউর রহমান গনতন্ত্রকে বিশ্বাস করতেন। বলা যায় এই দেশে আওয়ামী লীগ পুনরায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে জিয়াউর রহমানের জন্য।
বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, যারা নিজেদেরকে জনগণের তৈরি দল বলে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে পকেটে ঢুকিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলে। আর বিএনপিকে আওয়ামী লীগ বলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে তৈরি, সেই বিএনপি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকে পালিয়ে গিয়েছিলো অনেকেই ধরা দিয়েছিলো। যখন এই বাঙালি জাতি দিশেহারা তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধে ঝাপিয়ে পরে। দেশ স্বাধীন করে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে অযোগ্য করে তুলেছে এই সরকার। মা বোনের নিরাপত্তা নাই । বাসা থেকে বের হলে আর বাসায় ফেরা হয় না, গুম করা হয়। তাই এই দেশকে বাঁচাতে হলে এই ফ্যাসিস সরকারের পতন করতে হবে। এ ছাড়া এই জাতি মুক্তি পাবে না।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, সংগঠনের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসান প্রমুখ।