×

জাতীয়

জামায়াত প্রশ্নে হার্ডলাইন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৩ এএম

জামায়াত প্রশ্নে হার্ডলাইন!

ফাইল ছবি

   

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কা সমাবেশের অনুমতি দেবে না সরকার

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে রাজনৈতিকভাবে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার পর কোনো নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেনি দলটি। গত ১২ বছর যাবত বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতারা দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে এক দশক পর গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় দলটি। বিশেষ করে হঠাৎই কর্তৃপক্ষ সমাবেশের জন্য দলটিকে অনুমতি দেয়ায় এ নিয়ে নানা রকম কথা উঠে রাজনৈতিক অঙ্গনে। সমালোচনার মুখে পড়ে এখন জামায়াত প্রশ্নে হার্ডলাইনে থাকার কথা ভাবছে সরকার। নাশকতার আশঙ্কায় স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে আর কোনোভাবেই মাঠে নামতে দেবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শেষে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়। একই সঙ্গে একাধিক রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছে। এসব রায়ের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। এরপর দলটি বিভিন্নভাবে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। গত ১০ বছর প্রকাশ্যে করতে পারেনি কোনো সভা-সমাবেশ। সেই জামায়াত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ প্রাকাশ্যে সরব হয়ে উঠে। দলটির হঠাৎ রাজপথে সরব হওয়া কিংবা প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে প্রশাসনের অনুমতি দেয়ার নেপথ্যে কী? এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা। কারণ এর আগে পুলিশ যেমন দলটিকে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি; তেমনি পুলিশের বাধার কারণে দলটির কর্মী-সমর্থকরাও প্রকাশ্যে কোথাও বৈঠকেরও সুযোগ পাননি। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বহুবার আইন করে দলটিকে নিষিদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমন কথাও বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেই দলটির একটি প্রতিনিধি দল যখন সমাবেশের জন্য পুলিশ কমিশনারের অফিসে যান- তখনই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। একই সঙ্গে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যও মানুষের দৃষ্টি এড়ায়নি।

গত ১০ জুন ঢাকায় ঘরোয়া সমাবেশের অনুমতি পেয়ে বড় জমায়েত করেছিল জামায়াতে ইসলামী। প্রায় এক দশক ধরে অনেকটা ‘নিষিদ্ধ’ থাকার পর হঠাৎ জামায়াতকে সরকার ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেয়। এটি আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ সূত্রপাত নাকি ওই সমাবেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ‘ফল’- এমন নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ঢাকার সমাবেশের পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা চাঙাও হন। পরে সব সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ এবং এরপর বড় জেলা শহরে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। কিন্তু গত ১৫ জুলাই সিলেটে সমাবেশ করার কথা থাকলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় করতে পারেনি। গত শনিবার চট্টগ্রামে সমাবেশ করার কথা থাকলেও পুলিশের অনুমতি পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা চাপে পড়েছে দলটি। এর মধ্য দিয়ে সরকারের হার্ডলাইনের বিষয়টিও স্পষ্ট হচ্ছে।

দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন- জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে বিচার করার সুযোগ রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে একাধিক রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে। তারপরও কেন দলটিকে নিষিদ্ধে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার কথা বলে জামায়াতকে নিষিদ্ধের পথে হাটেনি সরকার। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা আড়ালে-আবডালে থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। যেখানে স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটিকে নিষিদ্ধে উদ্যোগ নেয়ার কথা, উল্টো দলটি মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, জামায়াতের রাজনীতি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপন্থি। যতক্ষণ আপিল নিষ্পত্তি না হবে, ততক্ষণ দলটিকে রাজনীতি করতে দেয়া ঠিক হবে না।

এদিকে, চট্টগ্রাম ও সিলেটে জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি না দেয়ার কারণ হিসেবে নাশকতার কথা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একটি গোপনীয় প্রতিবেদনের কারণেই চট্টগ্রাম ও সিলেটে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন, জামায়াতের সমাবেশে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে, তাই অনুমতি দেয়া হয়নি।

জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, সিলেট এবং চট্টগ্রামে নয় শুধু, জামায়াতকে আর কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। এটিই চূড়ান্ত। কয়েকটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করে জামায়াত-শিবির মাঠে নামলে কঠোর আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন হারানোর পর তা ফিরে পেতে একই বছরের ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে আপিল করলেও সেই আপিলের আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি দলটি। ফলে দশ বছর ধরে আপিল বিভাগে পড়ে আছে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি। নিবন্ধন ফিরে পেতে দলটির আইনগত চেষ্টাও ছিল না। তবে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে অবশেষ দলটি আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করেছে গত ১৬ জুলাই। একই সঙ্গে হঠাৎ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠায় দলটির রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধে এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে নিবন্ধনের আপিলের সঙ্গে গত ২৬ জুন একটি সংক্ষিপ্ত আবেদন জমা দিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। আবেদনে দলটি যাতে সভা-সমাবেশ ও মিছিল কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। এই আবেদনের উপর আগামী ৩১ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানির দিন নির্ধারিত রয়েছে। বলা যায়- জামায়াতের রাজনীতির ভাগ্য ঝুলছে সর্বোচ্চ আদালতে।

এ বিষয়ে আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মিলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ওই নামে কোনো রাজনৈতিক দল তৎপরতা চালাতে পারে না। আমরা আদালতে সেটাই তুলে ধরব। তবে জামায়াতের আইনজীবী ও দলীয় কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা, মিছিল-মিটিং করা একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার খর্ব করা যায় না। তাই আইনিভাবেই মোকাবিলা করে জামায়াতের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App