×

জাতীয়

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩১ এএম

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ

ফাইল ছবি

   

শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখে এসপিএম প্রকল্প

যান্ত্রিক ত্রুটি এবং কারিগরি দক্ষতার অভাবে প্রথমেই ধাক্কা খেল পাইপলাইনের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে জ্বালানি সরবরাহের ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং-এসপিএম নামে প্রকল্পটি। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হয়েছিল। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রকল্পটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হলেও প্রথম জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে না পারায় এসপিএম প্রকল্পটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

গভীর সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পটি গত ৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এই প্রকল্পে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি থেকে প্রথমবারের মতো তেলভর্তি জাহাজ থেকে তেল খালাস শুরু হয়। কিন্তু পাইপলাইনে ত্রæটির কারণে চালু হওয়ার ৩ দিনের মাথায় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি প্ল্যান্টে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাগরের তীব্র স্রোতে জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় পাইপ নির্ধারিত স্থান থেকে ছুটে গেছে। তবে আরেকটি সূত্র বলছে, পাইপ লিক করেছে। সাগরে কিছু জ্বালানি তেল ভেসে গেছে। ঠিক কী পরিমাণ জ্বালানি সাগরে পড়েছে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, সময় বাঁচাতে ও ব্যয় কমাতে আমদানি করা জ্বালানি তেল সরাসরি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে খালাসের জন্য পাইপলাইন নির্মাণে প্রায় ১৪ বছর আগে উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০০৮-০৯ সালের দিকে গৃহীত বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালের দিকে। আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল ও ফিনিশড প্রোডাক্ট স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এবং নিরাপদে খালাস করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

এই প্রকল্পে জ্বালানি তেলের খালাসের সময় কমে আসার পাশাপাশি তেলের অপচয় ও চুরি অনেকটা কমে আসবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসির অধীনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আট বছরে শেষ হয় এসপিএম নামের এই প্রকল্পটি। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটির ব্যয় ৬৯ শতাংশ বেড়েছে, টাকার অঙ্কে যা ৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় মোট ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। গত ৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সকাল ১০টা ১২ মিনিটে মাদার ভেসেল থেকে পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু হয়। এর ফলে এক লাখ টনের একটি বড় জাহাজের তেল খালাসের সময় ১১ দিন থেকে দুদিনে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এদিকে প্রকল্পটির মাধ্যমে তেল সরবরাহ করতে না পারায় সনাতন পদ্ধতিতেই এখন তেল খালাস করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন-বিএসসির দুটি লাইটার জাহাজ মাতারবাড়ীতে বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করবে। দুদিনের মধ্যে তেল খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন- বিপিসি জানায়, বর্তমানে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে।

এসপিএম প্রকল্পটি পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এতে জ্বালানি তেলের মজুত ও সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং জোগানের নিরাপত্তাও বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল। গতানুগতিক লাইটার পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় গভীর সমুদ্রে মুরিং পয়েন্ট নির্মাণ এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ৯০ একরের কাছাকাছি জায়গা অধিগ্রহণ করে প্রকল্পের জন্য ছয়টি স্টোরেজ ট্যাঙ্কার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পরিশোধিত তেলের জন্য, বাকিগুলো অপরিশোধিত তেলের জন্য। এ প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্র থেকে মহেশখালী ট্যাঙ্ক টার্মিনাল পর্যন্ত ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি পৃথক পাইপলাইন এবং মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১১০ কিলোমিটার

দৈর্ঘ্যরে দুটি পৃথক পাইপলাইন (ডিজেল ও ক্রুড অয়েলের জন্য) স্থাপন করা হয়েছে। এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি মহেশখালীতে প্রতিটি ৫০ হাজার টনের তিনটি ক্রুড অয়েলের ট্যাঙ্ক এবং প্রতিটি ৩০ হাজার টনের ডিজেল মজুতের ট্যাঙ্ক টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোড করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে সেই তেল যাবে কালারমারছড়ায় পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে তেল যাবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। কথা ছিল, পাইপলাইনে অপরিশোধিত জ্বালানি বা ক্রুড অয়েল সরবরাহ প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী সেপ্টেম্বরে ডিজেল অংশের আনুষ্ঠানিক কমিশনিং শুরুর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শুরুতেই এটি হোঁচট খাওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনেকটা ভেস্তে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মুখপাত্র ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আশরাফ আমিন ভোরের কাগজকে বলেন, এসপিএম প্রকল্পের জ্বালানি তেল নিয়ে আসা প্রথম জাহাজ যথাযথভাবে তেল পাইপলাইন দিয়ে খালাস করতে পারেনি। কী কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে তা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ভালো বলতে পারবে। তবে বিপিসির দুটি লাইটারেজ জাহাজ তেল খালাসের জন্য সেখানে যাচ্ছে। দুয়েক দিনের মধ্যে আগের পদ্ধতিতে তেল খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহমাদ ভোরের কাগজকে বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে সমুদ্র থেকে জ্বালানি সরবরাহ প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চলছিল। যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দেয়ায় ওই প্রকল্পে তেল খালাস বন্ধ আছে। তবে পাইপলাইনের ত্রæটি, নাকি পাইপলাইন ফেটে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জানায়নি। তিনি আরও বলেন, পাইপলাইন ত্রæটির বিষয়টি নিশ্চয়ই সমাধানযোগ্য। তবে তা ঠিক করতে কত সময় লাগবে তা নিশ্চিত নয়। দুয়েকদিনের মধ্যে আগের মতো লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে তেল খালাস শুরু হবে।

এ বিষয়ে জানতে এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক ও ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. শরীফ হাসনাত, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসির পরিচালক (অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং) খালিদ আহম্মেদ, মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মোস্তফা কুদরত-ই-ইলাহির সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App