×

জাতীয়

বৈঠক দিল্লিতে, আগ্রহ ঢাকায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:১৫ এএম

বৈঠক দিল্লিতে, আগ্রহ ঢাকায়

উজরা জেয়া

   

কাল আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

বাইডেন প্রশাসনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ঢাকা আসার আগে দলটি এখন দিল্লিতে রয়েছে। দিল্লিতে প্রতিনিধিদলটি ভারত সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, নাগরিক প্রতিনিধি এবং তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামার সঙ্গে বৈঠক করবে। এরপরই তারা ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবে। এর আগে, বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি গত শনিবার রাতে দিল্লি এসে পৌঁছে। তার সফরসঙ্গী দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে তাদের সফর বিশেষ বার্তা বহন করে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আজ সোমবার দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে উজরা জেয়া বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, গণতন্ত্র, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং মানবিক ত্রাণ বিষয়ে সহযোগিতা এবং মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। এরপর তিনি ঢাকায় আসবেন। তবে এটা ঠিক, ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন নীতির বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। উজরা জেয়ার সফরের সময় মোদি সরকার হাসিনা সরকারের পক্ষে হস্তক্ষেপ করবে কিনা তা দেখার বিষয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারে। ঠিক কী কথা হবে- তা জানতে দিল্লির দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ঢাকা। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হয়নি ঢাকা।

জানতে চাইলে দিল্লিতে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে। আজ এই বৈঠক হওয়ার কথা।

প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি আরোপ করার পর উজরা জেয়ার বাংলাদেশে প্রথম সফর। গত ২৫ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি আরোপ করে। বাংলাদেশ এই নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সামরিক প্রবেশাধিকার চায়। অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ভারতবর্ষে যাত্রা শুরুর আগে এক টুইটবার্তায় উজরা জেয়া লিখেছেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অবদান রাখতে ভারত ও বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছি। ভারতে পৌঁছে তিনি আরেক টুইটবার্তায় লিখেন, নমস্তে, নয়াদিল্লি! নরেন্দ্রমোদির রাষ্ট্রে এসেছি। ঐতিহাসিক এই রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত সরকার এবং সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। একসঙ্গে আমরা এমন একটি কাজ করছি- যাতে আরো উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ, সুরক্ষিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপক হিসেবে এই অঞ্চল প্রতিষ্ঠা পাবে।

এদিকে, উজরা জেয়ার এই সফর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে তার কর্মসূচি কী, সে বিষয়ে এ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কিছু জানায়নি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, গণতন্ত্র, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সমাধান, মানবিক ত্রাণ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, উজরা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেই আলোচনায় বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, গণতান্ত্রিক আবহ ও আঞ্চলিক সুস্থিতি প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও এই সফর উপলক্ষে দিল্লি গিয়েছিলেন। যদিও তিনি এরইমধ্যে ঢাকায় ফিরে এসেছেন।

বাংলাদেশে উজরার আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন এবং মানবাধিকার রক্ষা, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার পথে যারা অন্তরায় হবেন, তাদের ভিসা দেবে না বলে যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগে নতুন নীতি ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হচ্ছে, এ সফরে তিনি নির্বাচনের পটভূমিতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। সরকারি বেসরকারি ও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয় নিয়েও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারির একযোগে ভারত ও বাংলাদেশ সফর একাধিক কারণে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মন্ত্রী ভারত সফর শুরু করছেন। সেই মন্ত্রী আবার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, যার ক্রমাবনতি নিয়ে পশ্চিমা সরকারি বেসরকারি সংগঠনগুলো ধারাবাহিক সমালোচনা করে চলেছে। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্বিগ্ন, কংগ্রেসম্যানের মন্তব্য তার প্রমাণ। উজরা জেয়ার সফরও তাই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও বাংলাদেশ একই সঙ্গে উজরা জেয়ার সফরসূচিতে থাকা আরো তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংলাদেশ নীতি’ ভারতকেও চিন্তায় রেখেছে। ভারত চায় না প্রতিবেশী দেশে নির্বাচন ঘিরে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, যাতে ভারতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ে, এমন কোনো পদক্ষেপও ভারতের কাম্য নয়।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কেউ উল্টোপথে নিতে পারবে না : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গত এক দশকে এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে কেউ একে আর উল্টোপথে নিয়ে যেতে পারবে না। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জি-২০র প্রধান সমন্বয়ক হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। শ্রিংলাকে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। শ্রিংলা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে স্পষ্ট করেন ‘নয়া প্রজন্ম-নয়া দিশা’। তিনি বলেন, সম্পর্ক এখন পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বর্ণনা অনুযায়ী ‘সোনালী আধ্যায়ে’। মোদির সরকারের গত নয় বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে যে সম্পৃক্ততা গড়ে উঠেছে তা গত ৪০ বছরে কখনো হয়নি। এই কারণেই এটি অপরিবর্তনীয়। শ্রিংলা আরো বলেন, বাংলাদেশ পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়েছে।

বাণিজ্যের পরিমাণ ১৮০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আগামী দিনে এটি আরো বাড়বে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত অবকাঠামো, বিশেষ করে রেল ও বন্দর সংযোগে বিনিয়োগ করেছে। আর এটি উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বেড়েছে, ভারতের রপ্তানিও বাড়ছে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগের বিষয়ে শ্রিংলা বলেন, আমরা একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি যার আওতায় ভারত বাংলাদেশিদের জন্য বছরে ১৫ লাখ ভিসা দিচ্ছে। আগে এটি ছিল মাত্র পাঁচ লাখ। এখন তা ২০ লাখে পৌঁছেছে। হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারতের কোনো অভ্যন্তরীণ নীতি বাংলাদেশের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ভারতে নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে বিতর্কের সময় গুজব ছড়িয়েছিল যে অনেক মুসলিম বাংলাদেশে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্বের শীর্ষ থেকে নি¤œ পর্যন্ত আমরা সফলভাবে বোঝাতে পেরেছি- আমাদের প্রতিবেশীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে- এমন কিছু করা হবে না। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রিংলা বলেন, ভারত চীনের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু ২০২০ সালে চীন সীমান্তে সব ধরনের সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে। সম্পর্কের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি এবং প্রযুক্তিগত এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মূল সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ভারতের প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App