হয়রানির অপর নাম মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩, ১২:০৯ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
কর্মকর্তা কর্মচারীদের নীরব ইশারায় মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দীর্ঘদিন যাবত দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে দিলে কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায় নির্ধারিত তারিখের আগেই। আর সরাসরি অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট করতে গেলে ‘হাড়ে হাড়ে’ টের পাওয়া যায় ভোগান্তি আর হয়রানি কাকে বলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই দালাল চক্র। পাসপোর্ট অফিসের সামনে থেকে শুরু করে বেউথা খাদ্য গুদাম পর্যন্ত রয়েছে অনেকগুলো ফটোকপির দোকান। এই দোকানগুলো সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে অফিসের ইন্দনে দালালচক্র তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। পত্রিকায় কিংবা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় এ বিষয়ে কোন সংবাদ প্রকাশিত হলে দালাল চক্র দু’একদিন একটু নীরব থাকে। কয়েকদিন পরেই তারা ফিরে যায় পূর্বের কর্মকাণ্ডে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফটোকপির দোকানদার আবু রায়হান জামান, সোহেল রানা, সুমন আহমেদ, রনি, আরিফ, জনি, সুজন, শুভ, শাহজাহান, রাসেল, আশিক, মিঠু, সবুজ, কাজল এবং সরকারি দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সানোয়ার ও শরীফসহ অসংখ্য দালাল অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের পাসপোর্ট বানিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত একজন জানান, পাসপোর্ট অফিসের উচ্চমান সহকারী ফজলেন্দার টুকটুকি, অফিস সহায়ক মো. কাউসারসহ একাধিক ব্যক্তি দালালদের সঙ্গে গোপনে লেনদেন করে থাকেন। আর এই টাকার হিসাব রাখেন সহকারী হিসাব রক্ষক তরিকুল ইসলাম।
পাসপোর্ট অফিসের দালাল আবু রায়হান জানান, আমার এখানে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আসলে আমি কাজ করে দেই। কিন্তু আমি কারো কাছ থেকে জোর করে কোন কাজ করিনা। ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও অফিসের ঘুষের টাকাসহ আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেই। আপনি শুধু ফিঙ্গার প্রিণ্ট দিয়ে বাড়ি চলে যাবেন এবং তারিখ অনুযায়ী এসে আমার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন।
অপর দালাল সোহেল রানা জানান, সরাসরি পাসপোর্ট করতে গেলে বই পেতে দেরি হবে। আর আমাদের মাধ্যমে করালে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। অফিসের ঘুষ আর পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ আমাকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিলে আমি করে দিতে পারবো। পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং পাসপোর্ট অফিসে নাকি বাড়তি কোন টাকা লাগে এমন প্রশ্নে তিনি নাক ছিটকিয়ে বলেন, আপনি পাগল আছেননা! অফিসে চ্যানেল না দিলে আপনাকে হয়রানি করবে। ফিঙ্গার দিতে গেলে আপনাকে ঘুরাবে। আর আমাদের মাধ্যমে অফিসে টাকা দিলে নগদেই ফিঙ্গার।
সিংগাইর থেকে আগত দুই সেবাগ্রহিতা জানান, আমরা ফিঙ্গার দেয়ার জন্য আজ তিনদিন যাবত ঘুরছি। আজকেও নাকি অফিসের বড় স্যার নাই। আমাদেরকে দুইদিন পরে আসতে বললেন। এরা সরাসরি না বললেও এদের আচরণে বোঝা যায়, আমরা যেন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট বানাই।
দৌলতপুর থেকে আগত মো. হৃদয় মিয়া ও সহিম মিয়া মিয়া জানান, আজ ৪ দিন যাবত এই অফিসে এসে ঘুরছি। আজ এখান থেকে আমাদেরকে বলছে, কম্পিউটারে নাকি ডাটা পাওয়া যাচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে আজও ঘুরে যাচ্ছি।
বেউথা এলাকার সেবা গ্রহিতা মো. ইউনুছ মিয়া জানান, আজ আমার পাসপোর্ট ডেলিভারি দেবার কথা। অফিসের কম্পিউটারে চেক দিয়ে আমাকে বলা হয়, আমার পাসপোর্ট নাকি এখনও ঢাকায় পাঠানো হয়নি।
মানিকগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, কেউ যদি অফিসের বাইরে দালালের সঙ্গে লেনদেন করে থাকে সেটা তাদের বিষয়। কোন সেবাগ্রহিতা যদি আমাদের অফিসের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে এরকম কোন অভিযোগ করে থাকেন, তবে তাদেরকে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। আমার অফিস সম্পূর্ণ দুর্নীতি মুক্ত। এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মোবাইলে এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।