স্বস্তির ঈদযাত্রায় শেষ মুহূর্তে কিছুটা ভোগান্তি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৪ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ




সড়কে যানজট ট্রেনের ছাদে যাত্রী লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়
শেষ মুহূর্তের ঈদ যাত্রায় পথে পথে মানুষের ঢল। সবাই তাড়াতাড়ি প্রিয়জনের কাছে পৌঁছাতে যেভাবে পারছেন সেভাবেই ছুটছেন ঘরের পানে। তবে স্বস্তির ঈদযাত্রায় শেষ মুহূর্তে কিছুটা বিশৃঙ্খলার কারণে ভোগান্তি বেড়েছে। সড়কপথে কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে যানজট। শৃঙ্খলা ভেঙে ট্রেনের ছাদে যাত্রীর ভিড়। যাত্রী সংকটে ভুগতে থাকা লঞ্চগুলোতে শেষ মুহূর্তে যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়। কোথাও কোথাও রাস্তায় যাত্রী থাকলেও দেখা দিয়েছে বাস সংকট।

গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দেশের কোনো সড়ক মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শাল্লা সেতু থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হাসান জানিয়েছেন, ভোরের দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছাকাছি সড়কে পরপর কয়েকটি গাড়ি নষ্ট হয়। এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ির চাপ পড়েছে মহাসড়কে। এতে সেতুপূর্ব গোল চত্ত্বর থেকে মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ি পর্যন্ত যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম টোলপ্লাজা দুইবার কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিলো। এই দুই দফা বন্ধের কার থাকার কারণে ছেড়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ যানবাহন দ্রুত সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে পারেনি। সড়কে দাঁড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার যানবাহন।

এছাড়া সেতুর ভায়াডাক্ট অংশে পরপর কয়েকটি পরিবহন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় যানবাহন চলাচলের গতি থেমে যায় এবং মহাসড়কের গাড়ির তীব্র চাপ থাকা কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে সেতু কর্তৃপক্ষ বিকন গাড়িগুলো দ্রুত সরব থেকে অপসারণ করে। কিন্তু ততক্ষণে ব্যস্ততম মহাসড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সেতুর পূর্বপাড় হয়ে উত্তরবঙ্গ গিয়েছে ২৭ হাজার ৩৬৮টি যানবাহন। এতে পূর্বপাড়ে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৬৮ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫০ টাকা। এছাড়া সেতুর পশ্চিমপাড় হয়ে ঢাকা গিয়েছে ১৫ হাজার ৭টি পরিবহন। এতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার ৯০০টাকা।
যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে। চান্দনা চৌরাস্তা এবং গাজীপুরের অপর কয়েকটি স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। খুবই ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা রিচা মহাসড়কের কোথাও কোন যানজট না থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এই মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ঈদযাত্রার শেষ দিনে রাজধানীর রেল স্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের এখন উপচে পড়া ভিড়। একই সঙ্গে সড়ক- মহাসড়কে যানবাহনের চাপ। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় হাজার হাজার যাত্রীর ঢল নেমেছে। অনেকেই ভেবেছিলেন ঈদ হবে রবিবার। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সবাই জানতে পারে যে সৌদি আরবের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে রবিবারে বাংলাদেশ আর ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা নাই, শনিবারে ঈদ নিশ্চিত। এরপর থেকেই সড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে।
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রোডের বাসগুলো অপেক্ষারত যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলছে। তবে এজন্য যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বাসগুলো মানিকগঞ্জ পর্যন্ত সারাদিন থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল ও আশেপাশের বাস কাউন্টার গুলোর সামনেও এখন ঘর মুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও যে যেভাবে পারছেন যানবাহনে উঠে পড়ছেন। টার্মিনালে কেউ গাড়ির সন্ধানে ছুটছেন, আবার অসংখ্য যাত্রী কাউন্টারে বসে থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তবে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীসংকট না থাকলেও বাসের সংকট দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে এই বাস টার্মিনালে অসংখ্য যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু টার্মিনাল এ সময় ছিলো পুরোপুরি বাস শূন্য। ঢাকার বাইরে থাকা বাসগুলো ঢাকায় ফিরলেই দ্রুত যাত্রী নিয়ে বাসগুলোকে আবার টার্মিনাল ছাড়তে দেখা গেছে।

কমলাপুর রেলস্টেশন ঈদ যাত্রা শুরু থেকে শৃঙ্খলা থাকলেও শুক্রবার ভোট থেকে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। ঈদ যাত্রা ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও শুক্রবার তার ছিলো না। যাত্রীরা জোর করেই ছাদের উপরে উঠে পড়েছেন। ওই অবস্থায় ট্রেনগুলো যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে স্টেশন ত্যাগ করেছে।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনলেও এখন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকদিন যাত্রী সংকটে থাকা লঞ্চগুলো ঈদ যাত্রার শেষ মুহূর্তে যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে। লঞ্চগুলোতে তিল ধরনের ঠাঁই ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাটে ভিড় এতটাই ছিল যে যাত্রীদের প্রধান সড়ক থেকে লঞ্চ টার্মিনালের ভেতরে ঢুকতেই ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।