পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরীক্ষামূলক চালু ২১ জুলাই

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২২, ০৮:১৮ এএম

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। ফাইল ছবি
# সক্ষমতা বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও বন্দরের লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াতে নির্মাণ করা হয়েছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল-পিসিটি। নতুন এই কনটেইনার টার্মিনালটি চালু হলে আগের চেয়ে তুলনামূলক বড় জাহাজ সহজেই বন্দরের মূল জেটিতে ভিড়তে পারবে। এছাড়া জাহাজ ভেড়ার ক্ষেত্রে দূরত্ব কমার পাশাপাশি বিপজ্জনক বাঁক পেরুনোর ঝক্কি এড়ানো যাবে অনেকখানি। বর্তমানে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আছে টার্মিনালটি। আগামী ২১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে এই টার্মিনালে প্রথমবারের মতো বাল্ক জাহাজ ভিড়বে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। টার্মিনালটি চালু হলে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হবে।
বন্দর সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে চট্টগ্রাম বোটক্লাব পর্যন্ত এলাকায় নির্মিত হয়েছে এই টার্মিনাল। প্রায় ৩২ একর জমির ওপর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের অর্থায়ন করছে বন্দর। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পিসিটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পিসিটি প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি ইউনিটের কাছে প্রকল্পের কাজ হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি আরো আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নির্মাণকাজ শেষের সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানো হয়।
প্রকল্পে তিনটি কনটেইনার ও একটি ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি থাকবে। একসঙ্গে ভিড়তে পারবে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও একটি তেলবাহী জাহাজ। টার্মিনালটি সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বন্দরের বর্তমান জেটির চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। পিসিটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীনে পরিচালিত হবে। এ জন্য ‘ইক্যুইপ, অপারেট এন্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ টার্মিনাল জেটিতে অপেক্ষাকৃত বড় জাহাজের পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজ ভিড়তে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ভেতরে আসতে হয়। এর মধ্যে পার হতে হয় বিপজ্জনক বাঁকও। সেই বাঁকের ‘ঝক্কি’ এড়িয়ে, দূরত্ব ছয় কিলোমিটার কমিয়ে বাল্ক জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বন্দরের বর্ষপূর্তির সভায় বলেছিলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টিইইউ’স কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব মো. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী ২১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) জেটিতে বাল্ক জাহাজ (খোলা পণ্যবাহী জাহাজ) ভিড়তে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে কনটেইনারবাহী জাহাজও ভেড়ানো হবে। স্থায়ী কার্যক্রম শুরু হতে আরো কিছু সময় লাগবে। আগামী সেপ্টেম্বরে পিসিটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ক জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে ইয়ার্ডের কার্যক্রম চালু করা হবে। অপারেশনে কাউকে নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এটি পরিচালনা করবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ইকুইপমেন্টের পাশাপাশি জাহাজের ক্রেন দিয়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা হবে। তাই সমস্যা হবে না।
প্রসঙ্গত, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের বেশি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। বর্তমানে এ বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামে তিনটি টার্মিনালে মোট ১৯টি জেটি রয়েছে।