সূর্যোদয়ের সঙ্গে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৬ এএম

বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানিয়ে ছায়ানটের আয়োজনে রমনার বটমূলে গান শোনান শিল্পীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

বৃহস্পতিবার রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে শামিল হয়েছেন হাজারো মানুষ। ছবি: ভোরের কাগজ

রমনার বটমূলে শ্রোতাদের বৈশাখের গান শোনাচ্ছেন ছায়ানটের শিল্পীরা। ছবি: ভোরের কাগজ
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি আর চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ কষতে কষতে পেরিয়ে গেছে আরও একটি বছর। ভোরের নতুন সূর্য নতুন আলো ছড়িয়ে আবাহন করেছে নতুন দিনের। নতুন সুরে বেঁধেছে তান। প্রাণের স্পন্দনে জেগেছে প্রাণ। আলোকরশ্মির ছোঁয়ায় নবতরঙ্গে উদ্বেলিত হৃদয়। হৃদয়ে আজ সব দুয়ার খোলা। কারণ আজ চৈত্র দিনের ক্লান্তি শেষে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এসেছে বৈশাখ। নববর্ষ অসাম্প্রদায়িক বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার মোহনা। যে মোহনায় একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক-বাহক নববর্ষ। ধর্মান্ধ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই, প্রতিবাদ, অহিংস আন্দোলনের নাম বাংলা নববর্ষ।
রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে ৩৭টি আয়োজন দিয়ে। এর মধ্যে পঞ্চকবির গান, ব্রতচারীদের ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’, লোকগান ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’সহ আরও গান রয়েছে। সঙ্গে থাকছে আবৃত্তি-পাঠের মতো বিষয়গুলোও।
[caption id="attachment_344803" align="aligncenter" width="700"]
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ জানান, এবারের পরিবেশনে অংশ নেয়া শিল্পী সংখ্যা ৮৫ জন । শিল্পীদের এ সংখ্যা আগে ছিল প্রায় ১৫০।
১৯৬৭ সালে রাজধানীতে প্রথম রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সেই অনুষ্ঠানই মূলত নববর্ষ বরণের সাংস্কৃতিক উৎসবকে সারা দেশে বিস্তারিত হতে প্রেরণা লাভ করেছে। আর সেই সময় থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের একটা অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গও হয়ে উঠেছে ছায়ানটের বর্ষবরণের রেওয়াজ। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি।
[caption id="attachment_344804" align="aligncenter" width="700"]
ছায়ানটের পাশাপাশি বর্ষবরণে থাকছে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রকমারি কারুপণ্যের সম্ভার নিয়ে বৈশাখী মেলা প্রভৃতি। সাধারণত নববর্ষে পান্তা-ইলিশসহ নানা রকম দেশি খাবারের আয়োজন থাকে। তবে এবার পবিত্র রমজানে দিনের বেলায় এসব খাবারের আয়োজন থাকছে না। আর সব কর্মসূচিও রমজানের মর্যাদা রক্ষা করে পালন করা হবে বলে আগেই জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার কারণে এবার বেলা দুইটার মধ্যে পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। বেলা একটার পর উৎসব এলাকায় কাউকে আর ঢুকতে দেয়া হবে না। আর সকাল সাড়ে নয়টায় টিএসসি থেকে শোভাযাত্রা শুরুর পর আর কেউ ঢুকতে পারবে না।