×

জাতীয়

কয়েক কোটি জন্মনিবন্ধনের তথ্য গায়েব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:২৫ এএম

কয়েক কোটি জন্মনিবন্ধনের তথ্য গায়েব

অনলাইনে জন্ম সনদ সংগ্রহের জন্য জটিলতার মুখে পড়ছেন অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত

কয়েক কোটি জন্মনিবন্ধনের তথ্য গায়েব

প্রতীকী ছবি

কয়েক কোটি জন্মনিবন্ধনের তথ্য গায়েব

প্রতীকী ছবি

কয়েক কোটি জন্মনিবন্ধনের তথ্য গায়েব

প্রতীকী ছবি

   

আগে জন্ম নিবন্ধনের সনদ নিয়েছেন এমন কয়েক কোটি মানুষকে সম্পূর্ণ নতুন করে অনলাইনে জন্ম সনদ নিতে হবে। কেননা তাদের আগের জন্ম নিবন্ধন সনদ গায়েব হয়ে গেছে।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

কর্মকর্তারা জানান, এসব ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন অনলাইনে আপডেট করা হয়নি এবং এখন নতুন সার্ভারে আর পুরনো তথ্য স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না।

পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশের আবার একাধিক অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ঘটনাও বেরিয়ে এসেছে যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন প্রায় চার কোটি স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য ডিজিটাল ইউনিক আইডি তৈরির কাজ চলছে যার জন্য জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে, নতুন নিয়মে শিক্ষার্থীদের জন্মসনদের আবেদন করতে হলে তাদের মা-বাবারও জন্মসনদ দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বহু অভিভাবক দেখছেন যে তাদের আগে নেয়া জন্মসনদ এখন আর সরকারি সার্ভারে দেখাচ্ছে না। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে যারা ম্যানুয়ালি জন্মসনদ নিয়েছেন তাদের মধ্যে যারা নিজ উদ্যোগে বা সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন অফিস থেকে অনলাইনে এন্ট্রি করেননি তাদের জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য সার্ভারে আর নেই।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক বলেছেন, তাদের এখন সম্পূর্ণ নতুন করে আবেদন করে জন্ম নিবন্ধন নিতে হবে।

[caption id="attachment_333281" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

যেভাবে শুরু হয়েছিলো জন্ম নিবন্ধন

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারিক হিকমত জানান, আগে যারা ম্যানুয়ালি জন্মসনদ নিয়েছেন, তাদের তথ্যাদি অনলাইনে আপডেট করার জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ছিল।

তিনি বলেন, এগুলো নিবন্ধন অফিসগুলোরই করার কথা। ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেকটা হয়েছেও। কিন্তু পৌর এলাকাগুলোতে এটি হয়েছে খুব কম। যে কারণে বহু মানুষের তথ্য এখন আর অনলাইনে নেই। এখন আবার নতুন সার্ভারে পুরনো তথ্য স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। ফলে যাদেরটা বাদ পড়েছে তাদের নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করাতে হবে। তবে তবে এটি সংখ্যায় কত সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিবন্ধনের ধারণা প্রথম আসে ১৮৭৩ সালে। এরপর পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ আমলে এর প্রয়োজন হতো না।

২০০৪ সালে সরকার জন্ম নিবন্ধন বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করে। যা ২০০৬ সাল থেকে কার্যকর হয় এবং মূলত তখন থেকেই জন্ম নিবন্ধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ আইনের আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে সবাইকে জন্ম নিবন্ধনের নির্দেশনা দেয়া হয় এবং মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে ওয়ারিশদের মৃত্যু সনদ সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়।

এরপরই ১৮টি কাজের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সঙ্গে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নিবন্ধনের কাজ। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে অনেকে নিজ উদ্যোগে জন্ম সনদ নিতেন পাসপোর্ট করাসহ আরও কয়েকটি কাজে।

২০০৬ সালের পর বিভিন্ন কাজের জন্য জন্মসনদ চাওয়া শুরু হলে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় এবং ২০১১ সালের শেষদিকে আগে নেয়া জন্ম সনদগুলোর তথ্য অনলাইনে এন্ট্রি করা শুরু হয়। তারিক হিকমত বলেন, ইউনিয়ন অফিস, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও দূতাবাসগুলো থেকে এটা করার কথা। ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেকটা কাজ হলেও অন্যগুলোতে খুব একটা কাজ হয়নি বলেই বহু মানুষের তথ্য অনলাইনে আসেনি।

[caption id="attachment_333282" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটাল

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ সনদের তথ্য আপলোড হয়েছে। তবে অনেকের তথ্যই আপলোড হয়নি বলে তাদের এখন নতুন করে নিবন্ধন করাতে হবে।

এদিকে, ২০১৩ সালে সরকার আইন সংশোধন করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্ব দেয়, যা ২০১৬ সাল থেকে কার্যকর হয়।

এর মধ্যে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার চালু করা হয়। এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১২ সালে। সে সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুরোনো নিবন্ধিতদের জন্মনিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে বললেও সেটি বেশিরভাগ মানুষের অগোচরে থেকে যায়। এ বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১১ সালের পর থেকে সব জন্ম নিবন্ধন অনলাইনেই হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের তথ্যগুলো অনলাইনে আপলোডের সুযোগ ছিলো।

এরপর নতুন সার্ভার এলে পুরনো তথ্য আপলোডের সুযোগ না থাকায় ২০১১ সালের আগে করা বহু নিবন্ধন অটোমেটিক গায়েব হয়ে যায়। অর্থাৎ সেগুলো অনলাইনেই কখনও আসেনি।

[caption id="attachment_333283" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

নতুন সংকট : দ্বৈত নিবন্ধন আর গায়েব কোটি কোটি

সম্প্রতি স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার পঞ্চম শ্রেণীতে পিএসসি পরীক্ষার সময়েও জন্ম সনদ দিতে হয়। রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস বলছে, দেশের প্রায় চার কোটি স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইউনিক আইডি খোলার কাজ শুরু করেছে সরকার।

তারিক হিকমত বলেন, এটি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীর স্কুলে ভর্তি আর পিএসসির সময়ে দেয়া জন্ম সনদের মিল নেই। অর্থাৎ তাদের নামে দুটি করে সনদ নিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। আমরা এটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছি।

শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সুরক্ষা অ্যাপে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্যও জন্মসনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০১১ সালের আগে নেয়া জন্মসনদ জাতীয় সার্ভারে নেই বলে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক বলেছেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত অনেকের জন্মসনদের তথ্য অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগেরই শেষ হয়নি।

এদিকে, ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর যাদের জন্ম, তাদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য শিশুর জন্মের প্রমাণপত্র অথবা টিকার কার্ড লাগবে। সেই সঙ্গে বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রও লাগবে। ফলে নবজাতকদের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে শহর এলাকাগুলো থেকে এখন অনেক বাবা মাকে ছুটতে হচ্ছে গ্রামে বা পৌরসভায় নিজের এলাকায়। সেখানে গিয়ে অনেকে দেখছেন যে তার তথ্যও অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়নি।

কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৫ কোটি জন্মনিবন্ধন একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App