বরিশালে মধ্যরাতে ভাঙা হয় সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১১ এএম

সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ি
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও শেখ হাসিনার ভাগ্নে ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসভবনে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
বরিশালের সেরনিয়াবাত ভবন এখন ধ্বংসস্তূপ। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর ছাত্র-জনতা সেরনিয়াবাত ভবন নামের ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে এবং ভাঙচুরের পাশাপাশি বাড়ির ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিক্ষুব্ধরা বাড়ির দেয়াল ভেঙে বুলডোজার প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
উত্তেজিত ছাত্র-জনতা সেনাবাহিনীর সদস্যদের 'ছাত্রলীগের দোসর' আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা সেনাসদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
রাত সাড়ে বারোটার পর থেকেই নগরীর কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবন ঘিরে হাজারো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হয়। ফেসবুকে আগেই এই হামলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিক্ষুব্ধরা বাড়ির দেয়াল ভেঙে বুলডোজার প্রবেশ করানোর চেষ্টা করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয়।
প্রথমে সেনাবাহিনী বুলডোজারের চাবি নিয়ে নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু উত্তেজিত ছাত্র-জনতা সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
সেনাসদস্যদের প্রতিরোধ ব্যর্থ হলে রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনী বুলডোজারের চাবি বিক্ষোভকারীদের হাতে তুলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। এরপরই ছাত্র-জনতা বুলডোজার চালিয়ে সেরনিয়াবাত ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সাদিক আবদুল্লাহ এই ভবনকে 'টর্চার সেল' হিসেবে ব্যবহার করতেন। আওয়ামী লীগ বিরোধী অনেককে এখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাহফুজুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বাড়ি ছিল ফ্যাসিবাদের প্রতীক। এখানে মানুষ নির্যাতিত হয়েছে, শোষিত হয়েছে। আমরা এই অভিশপ্ত বাড়ি আর বরিশালে থাকতে দেব না।
বিক্ষোভকারী ইয়াকুব মিয়া বলেন,সাদিক আবদুল্লাহর এই বাড়ি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির স্মারক। তাই আমরা এটিকে ধ্বংস করছি।
এর আগেও এই ভবনে হামলা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট উত্তেজিত জনতা এই ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রসহ তিনজন নিহত হন।
এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার একটি ভাষণের পর ফের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুরের পর বরিশালে সেরনিয়াবাত ভবন গুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বুধবার গভীররাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ছাড়াও শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনার পর বরিশালে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে নতুন সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।