বিএনপি নেতার মামলা
জামিনে থেকেও পালিয়ে বেড়াচ্ছে দিনমজুর পরিবার

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বিএনপি নেতার উল্টো মামলায় জামিনে এসেও বাড়িতে থাকতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক দরিদ্র দিনমজুর পরিবার। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই গ্রামে। ওই বিএনপি নেতা নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পিয়ার আলী।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, পিয়ার আলীর বোন প্রভাবশালী সেলিনা আক্তারের বাড়ির পাশেই বসবাস করেন মিন্টু মিয়া নামে এক হোটেল শ্রমিক। মিন্টু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম একজন গার্মেন্টস কর্মী। মিন্টু মিয়ার সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে চাকরি করে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করে উক্ত জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ ৪ সদস্যদের পরিবার মিন্টু মিয়ার। হোটেলে কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। একদিন কাজে না গেলে সেইদিন কাটে তাদের অনাহারে অর্ধাহারে।
মিন্টু মিয়ার পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, মিন্টু মিয়ার বাড়ির জমিটুকুর প্রতি লোভ জাগে প্রতিবেশী বিএনপি নেতা পিয়ার আলীর বোন প্রভাবশালী সেলিনা আক্তারের। উক্ত জমি ক্রয় করার জন্য মিন্টু মিয়াকে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন সেলিনা। কিন্তু মিন্টু মিয়া তাতে রাজি হননি। এরপর থেকে হোটেল শ্রমিক মিন্টু মিয়াকে তার বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের উদ্দেশে সেলিনা ও তার পরিবারের লোকজন শুরু করে গভীর ষড়যন্ত্র। তারা কিছুদিন ধরে মিন্টু মিয়ার সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধানোর পাঁয়তারা করে আসছিলেন।
গত ৭ ডিসেম্বর শনিবার সকালে মিন্টু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাড়ির সামনে রাস্তায় পাশে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। এ সময় সেলিনার মেয়ে জামাই মোস্তাফিজুর রহমান ফাতেমা বেগমকে উত্ত্যক্ত করেন। ফাতেমা বেগম এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে নেতা পিয়ার আলীসহ তার লোকজন ফাতেমাকে বেধড়ক মারধর ও টানাহেঁচড়া করে। ফাতেমার স্বামী মিন্টু মিয়া ও আশপাশের লোকজন ফিরাতে এলে তাদের মারধর করে। সংঘর্ষে গুরুতরভাবে আহত হন ফাতেমা ও তার স্বামী মিন্টু।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে ভেবে পিয়ার আলী তার ভাগ্নি জামাই মোস্তাফিজুর রহমানকে আহত সাজিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সঙ্গে সঙ্গে মিন্টু মিয়াসহ ৪ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সেলিনা আক্তার। অভিযোগ পেয়েই শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা।
জানা যায়, এ ঘটনায় শুধু পুলিশের পাশাপাশি চলে সেনাবাহিনীর অভিযান। সেনাবাহিনী মিন্টু মিয়ার চাচাতো বোন জেসমিন নামে এক গৃহবধূকে আটক করে থানা পুলিশে হস্তান্তর করে। এ ব্যাপারে পিয়ার আলীর বোন সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ দায়ের করেন মিন্টু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৭ জনকে আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আরো পড়ুন : বাঞ্ছারামপুরে বড় জা'য়ের লাথিতে ছোট জা নিহত
এ ঘটনায় ফাতেমার অভিযোগের বিষয়ে মামলা না হয়ে উল্টো মামলা হয় সেলিনা আক্তারের নামে। মামলা দায়ের করার পর থেকেই অপর ৩ আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য ডেফলাই গ্রামে চলে বিরতিহীন পুলিশি অভিযান। এক পর্যায়ে উক্ত মামলার আসামি মিন্টু মিয়ার চাচা দিনমজুর ইউসুফ আলী, চাচি শিউলি বেগম ৯ ডিসেম্বর আদালত থেকে জামিনে আসেন। মিন্টু মিয়ার চাচা ইউসুফ আলী জানান, জামিনে আসার পরও বিএনপি নেতা পিয়ার আলীও তার লোকজনের ভয়-ভীতি ও হুমকির মুখে ইউসুফ আলী বাড়িতে থাকতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া গৃহবধূ জেসমিন জামালপুর জেলা কারাগারে রয়েছেন।
গ্রামবাসীরা জানান, পিয়ার আলীর ভাগ্নি সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। অপরদিকে ফাতেমার দেয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে আমলে নেয়নি থানা পুলিশ। এছাড়া পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রমিক মিন্টু মিয়াও। বর্তমানে মিন্টু মিয়ার পরিবারের অন্য সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নলকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান বলেন, পিয়ার আলী নিজের দলের হলেও তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা ন্যক্কারজনক। এ ব্যাপারে পিয়ার আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, ফাতেমা বেগমের অভিযোগ পাওয়া গেছে, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।