উত্তর গাজায় ১ দিনে ফিরেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬ এএম

টানা ১৫ মাস ধরে চলা অভিযানে নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি। ছবি : সংগৃহীত
গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা উত্তর গাজায় তাদের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) গাজা উপত্যকায় ফিরেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার জনসংযোগ দপ্তর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর উত্তর গাজার এই বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ এতদিন উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ৪৭০ দিন পর নিজেদের বাড়িতঘরে ফিরছেন তারা। খবর আনাদোলুর।
ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উত্তর গাজায় এখন কোনো বাড়িঘরই অক্ষত নেই। কিন্তু তারপরও প্রায় ১৫ মাস পর নিজেদের এলাকায় ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত উত্তর গাজার বাসিন্দারা।
সোমবার সকাল থেকেই নেৎজারিম করিডোর দিয়ে উত্তর গাজায় আসতে শুরু করেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। অনেকেই ঘোড়া কিংবা গাধার গাড়িতে নিজেদের মালপত্র নিয়ে আসেন। উত্তর গাজার কেন্দ্রীয় শহর গাজা সিটির প্রধান সড়কের একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে ‘গাজায় স্বাগতম’ লেখা ব্যানার টাঙানো ছিল এ সময়।
উত্তর গাজার বাসিন্দা ২২ বছরের তরুণী লামিস আল ইওয়াদি দীর্ঘদিন পর নিজ এলাকায় ফিরতে পেরে খুবই আনন্দিত। এএফপিকে তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আমার মনে হচ্ছে— এতদিন আমি মৃত ছিলাম; আজ আমার দেহে ফের জীবন এবং আত্মা ফিরে এসেছে।
আরো পড়ুন : পায়ে হেঁটে ২ ঘণ্টায় দুই লাখ ফিলিস্তিনির গাজায় প্রবেশ
চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংস্তূপ তাকে হতাশ করতে পারেনি। এএফপিকে লামিস বলেন, আমরা আবার আমাদের ঘরবাড়ি তৈরি করব। এমনকি যদি শুধু বালি আর কাদা দিয়ে তৈরি করতে হয়, তবুও।
গাজায় হামাসের এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ফিরে আসা এই বাড়িঘর হারানো এই ফিলিস্তিনিদের সাময়িক আশ্রয় হিসেবে অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবু প্রয়োজন।
সোমবার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ৪৮ ঘণ্টা পর গাজা উপত্যকার উত্তরে একটি করিডোর খুলেছে ইসরায়েল। বিলম্বের জন্য ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েল বলেছে, জঙ্গি গোষ্ঠীটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে, যা নিশ্চিত করেছিল যে লোকেরা উত্তরে ফিরে যেতে পারবে।
শনিবার দ্বিতীয় দফায় জিম্মি মুক্তির সময় হামাস আরবেল ইয়েহুদ নামে এক বেসামরিক নারী জিম্মিকে মুক্তি দেবে বলে আশা করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু তা না হওয়ায়, ইসরায়েল উত্তর গাজায় লোকজনকে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নেটজারিম করিডোর খোলার কাজ বিলম্বিত করে। এরপর হামাস বৃহস্পতিবার এবং শনিবার ইয়েহুদসহ আরো জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয় বলে রবিবার জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
২০২৩ সালের ৭ আগস্ট ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। টানা ১৫ মাস ধরে চলা সে অভিযানে নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরো ১ লাখ ১২ হাজার জন এবং গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের ব্যাপক ও বিস্তৃত কূটনৈতিক তৎপরতার জেরে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে গাজায়। গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারাও ফেরা শুরু করেছেন।