গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৮ এএম

দুই পক্ষের মধ্যে ব্যবধান ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
গাজায় চলামান যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করেছের মধ্যস্থতাকারীরা। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনার পর যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েল এবং হামাসকে একটি চূড়ান্ত চুক্তির খসড়া দেয়া হয়েছে।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনার বিষয়ে অবগত একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর আরব নিউজের।
বাইডেন বলেছেন, তার সমর্থনে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তি বাস্তবায়ন একেবারে শেষ প্রান্তে এবং হামাস একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী বলে তারা জানিয়েছে।
বাইডেন তার পররাষ্ট্র নীতির সাফল্য তুলে ধরে এক বক্তৃতায় বলেন, যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি জিম্মিদের মুক্ত করবে, যুদ্ধ বন্ধ করবে, ইসরায়েলকে নিরাপত্তা প্রদান করবে এবং হামাসের শুরু করা এই যুদ্ধে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার সুযোগ দেবে।
আরো পড়ুন : ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় প্রাণহানি সাড়ে ৪৬ হাজার ছাড়াল
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করা ওই কর্মকর্তা বলেন, দোহায় আলোচনায় উভয় পক্ষের কাছে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি উপস্থাপন করে কাতার। যেখানে ইসরায়েলের মোসাদ এবং শিন বেট গুপ্তচর সংস্থার প্রধান এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে দোহায় আরো এক দফা আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এবং বাইডেনের দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে এবং খুব শিগগিরই চুক্তি হতে পারে, হয়তো কয়েক ঘণ্টা কিংবা একদিনের মধ্যে। চুক্তির অংশ হিসেবে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার জন্য আলোচনা অগ্রসর হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে রবিবার কথা বলেছেন এবং কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে সোমবার আলাপ করেছেন।
কাতার গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া, বাইডেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে ব্যবধান ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। আমি মনে করি এখন এই চুক্তি সম্পন্ন করার একটি ভালো সুযোগ রয়েছে, পক্ষগুলো এই চুক্তিটি সম্পন্ন করার একেবারে কাছাকাছি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা থেকে বাদ যায়নি ২৩ লাখ বাসিন্দার এই উপত্যকার মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, এমনকি শরণার্থী শিবিরও। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজাবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।