৬০ বছর আগে ফাঁসি দেয়া মোসাদ গোয়েন্দার দেহ ফেরত চায় ইসরায়েল

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০২ পিএম

ছবি : সংগ্রহীত
১৯৬৫ সালে সিরিয়ার মারজেহ স্কয়ারে আন্তর্জাতিক ক্ষমার আহ্বান সত্ত্বেও ইলি কোহেন নামের এক মোসাদ গুপ্তচরকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়। দীর্ঘ ৬০ বছর পর, মোসাদ সদস্য ইলি কোহেনের মরদেহ ফেরত চাওয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
গুপ্তচর ইলি কোহেন এবং তার মিশন
১৯২৪ সালে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় এক ইহুদি পরিবারে জন্ম নেন ইলি কোহেন। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তিনি তার পরিবারসহ ইসরায়েলে অভিবাসন করেন এবং সেখানেই ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬০-এর দশকে তাকে মোসাদে নিয়োগ দেয়া হয়।
কোহেনের বিশেষত্ব ছিল তার ভাষাগত দক্ষতা—তিনি মিশরীয় আরবী, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। এর ফলে তাকে সিরিয়ায় একটি জটিল ছদ্মপরিচয় দেয়া হয় এবং সেখানে ‘কামেল আমিন থাবেত’ নামের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
কোহেন তখন আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে বসবাসরত আরব ও সিরিয়ান সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করেন। ১৯৬২ সালে দামেস্কে পৌঁছে তিনি সিরিয়ার উচ্চপর্যায়ের সমাজে প্রবেশ করেন এবং সিরিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বিলাসবহুল পার্টির আয়োজন করতে থাকেন। এসব পার্টি থেকে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে তিনি ইসরাইলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে গোলান মালভূমি দখলের ক্ষেত্রে।
ধরা পড়া এবং মৃত্যুদণ্ড
১৯৬৫ সালে কোহেনের গুপ্তচরবৃত্তি আকস্মিকভাবে প্রকাশ পায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় সিরিয়ান গোয়েন্দারা তার ইসরায়েলে পাঠানো গোপন রেডিও সংকেত শনাক্ত করেন। এর ফলস্বরূপ, ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কোহেনকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ১৯৬৫ সালের ১৮ মে সিরিয়ার মারজেহ স্কয়ারে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়।
মরদেহ ফেরত আনার প্রচেষ্টা
কোহেনের মৃত্যুদণ্ডের পর তার মরদেহের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ইসরায়েল বারবার তার মরদেহ ফেরত নেয়ার চেষ্টা করলেও, সিরিয়া এর জন্য একাধিকবার সাড়া দেয়নি। এমনকি সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তার মরদেহ সরিয়ে ফেলেছে বলে জানা যায়। তবে ২০১৮ সালে কোহেনের একটি হাতঘড়ি উদ্ধার করে মোসাদ, যা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
সম্প্রতি সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর নতুন আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইসরাইলি কর্মকর্তারা, বিশেষ করে মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়া, সিরিয়ার সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছেন। এসব আলোচনা রাশিয়ার মধ্যস্থতায় পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা যায়। ইলি কোহেনকে এখন ইসরায়েলের অন্যতম প্রখ্যাত গুপ্তচর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার সংগ্রহ করা তথ্যের মাধ্যমেই ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়ে ইসরায়েল জয়ী হয়।